ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

মাছ-মাংস নয়, ভাতই মেটাবে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২০
মাছ-মাংস নয়, ভাতই মেটাবে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি

কলকাতা: মানব শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে নতুন ধান আবিষ্কার করেছেন ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক জেলার ‘জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে’র বিজ্ঞানীরা। 

সাধারণত আমরা যে চালের ভাত খেয়ে থাকি তাতে ৬ থেকে ৮ শতাংশ প্রোটিন থাকে। কিন্তু ‘সিআর ৩১০’ নামে যে নতুন ধানটি আবিষ্কার হয়েছে তাতে প্রোটিনের মাত্রা থাকছে প্রায় ১১ শতাংশ।

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ওই ধান ভারতেই প্রথম আবিষ্কার বলে দাবি করেছেন ওই ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।  

গবেষণা সংস্থাটির অধিকর্তা ডক্টর দীপঙ্কর মাইতি জানিয়েছেন, উড়িষ্যার ‘নবীন’ নামে একটি ধানের জাতের সঙ্গে আসাম থেকে সংগৃহীত ‘এআরসি ১০০৭৫’ জাতের ধানের শংকরায়ণ ঘটিয়ে 'সিআর ৩১০' নামে নতুন প্রজাতির ধান তৈরি করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের খামারে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ধানটির চাষ করা হয়।

পরে আরও গবেষণা করে দেখা যায়, এরমধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ আছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এত বেশি প্রোটিন থাকার কারণে এ ধানের চাল থেকে তৈরি ভাত সাধারণের পাশাপাশি দুস্থ ও গরিব মানুষরা খেতে পারেন। যাদের দুধ, ডিম, মাছ, মাংস কেনার ক্ষমতা নেই। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে পারবে এ ধানের চালের ভাত খেয়ে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে ভারতের যেখানে ধান চাষযোগ্য জমি আছে সেসব রাজ্যেই এ ধান চাষ করা হোক।

ইতোমধ্যে ভারতের উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে ধানটি চাষের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গেও ধানটি চাষের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা।

এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যদি কোথাও কিছু ভাল থাকে তা আমরা নিশ্চয় গ্রহণ করি। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ যে ধানের কথা বলা হচ্ছে সেটি আমাদের রাজ্যের বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন। তারপর সেই ধান যদি আমাদের রাজ্যের জন্য অনুকূল হয় তা গ্রহণ করতে বাধা নেই।

এ বিষয়ে রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্র বলেন, সবদিক খতিয়ে দেখেই তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শুধু বেশি প্রোটিন রয়েছে বললেই হবে না। ওই ধানের চালের ভাত যদি মোটা বা শক্ত হয় রাজ্যবাসীর বেশিরভাগই তা গ্রহণ করবে না। সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা অবশ্য নতুন প্রোটিনযুক্ত এ ধানটি নিয়ে যথেষ্টই আশাবাদী। তাদের বক্তব্য, ভাত ভারতের প্রধান খাদ্য। বহু মানুষ আছেন যারা কোনো রকমে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছেন। ভালমন্দ খাবার জোটে না তাদের। ফলে পুষ্টির অনেকটাই ঘাটতি থেকে যায় শরীরে। সেক্ষেত্রে ভাত থেকে যদি বেশি মাত্রায় প্রোটিন মেলে তাহলে ঘাটতি অনেকটাই মেটানো সম্ভব।

তাদের দাবি, শুকনো ও ভিজে দুই মৌসুমেই সিআর ৩১০ জাতের ধানটি চাষ করা যাবে। হেক্টর প্রতি ফলন মিলবে সাড়ে চার টন। এরই পাশাপাশি জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্র সিআর ৩১১ নামে আরও একটি নতুন ধান আবিষ্কার করে ফেলেছেন। যার মধ্যে বেশি মাত্রায় প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে অনেক বেশি জিঙ্ক। ফলে ওই ধানের চাল থেকে তৈরি ভাত শরীরকে মজবুত করতে দারুণ কার্যকর হতে পারে। দু’টি ধান থেকে ১২০ থেকে ১২৫ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন হবে।

কলকাতার খাদ্য বিশেষজ্ঞ তথা নিউট্রিশিয়ানিস্ট শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলেন, নিত্যদিনের আমাদের খাদ্যের যে তালিকা থাকে তাতে শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রোটিন রাখা উচিত। প্রোটিন ও জিঙ্ক সঠিক মাত্রায় শরীরে প্রয়োগ হলে শরীর সুস্থ থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে এ রকম চাল যদি সত্যিই বাজারে আসে তাহলে গরিব কেন সবারই উপকার হবে। বিশেষ করে যারা নিরামিষভোজী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২০
ভিএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।