ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভারত

চেনা পাহাড়ের অচেনা রূপে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০
চেনা পাহাড়ের অচেনা রূপে

কলকাতা: ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির সুখের দিনগুলোতে বাধ সেধেছে করোনাকাল। তবে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের আশার বাণী পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ যে উচ্চতায় ছিল তা নিম্নগামী।

তাই রাজ্যের নিরিখে করোনায় আক্রান্তের চেয়ে করোনা নিরাময়ের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন বিলীন হতে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন।

কলকাতার কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মতে, যা আছে ভারতে তা আছে রাজ্যে। অর্থাৎ, বালিয়াড়ি সাম্রাজ্য বাদে ঝরনা, নদী, পাহাড়, সমুদ্র, বরফ সব রূপ-রং আছে পশ্চিবঙ্গে। পাহাড়ের বুকে ছোট্ট ট্যুরে কেউ যদি কয়েকটা দিন প্রাণভরে শ্বাস নিতে চায়, তাহলে অবশ্যই ঘুরে দেখতে পারে শৈলশহর। লকডাউনে যেন পুরো বুনো হয়ে উঠেছে চেনা পাহাড়। সেই চেনা পাহাড়ের অচেনা রূপে ডুব দিতে মরিয়া ভ্রমণপিপাসুরা। .মংপু
জীবনের বেশ কিছুটা সময় এই শৈলশহর মংপুতে কাটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তথ্য বলছে, মনমোহন সেন ও মৈত্রেয়ী দেবীর অতিথি হয়ে ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে তিনি তিনবার মংপু গিয়েছিলেন কবিগুরু। ফলে স্বয়ং কবিগুরু যেখানে শান্তির আশ্রয় পেতেন, সেই স্থান কী সুন্দর না হয়ে থাকতে পারে? মংপু মানেই বাহারি অর্কিডের স্বর্গরাজ্য। এখান থেকে সিকিমে দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। আর ৩২ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিংয়ের হাতছানি। আবার নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে এই মংপু। অতিথিদের থাকার জন্য আছে একাধিক হোম স্টে। রঙ্গারুন
গোটাবিশ্বে যে চায়ের সমাদর আছে যুগ যুগ ধরে, সেই দার্জিলিং চায়ের আতুঁড়ঘর রঙ্গারুন। এখানে জানলা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাত হাজার ফুট উপরে এ শহরের অন্যতম আকর্ষণ ঘুম স্টেশন। যেটি বিশ্বের উচ্চতম রেল স্টেশন। এখান থেকে দার্জিলিং শহর খুবই কাছে। টাইগার হিলও নাগালের মধ্যেই। রঙ্গারুনে সূর্যোদয় দেখাও এক মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা। সিটং

আকারে ছোট হলেও স্বাদ আর ঘ্রাণে দার্জিলিংয়ের কমালেবুর জুড়ি মেলা ভার। দার্জিলিংয়ের কমালেবুর আঁতুড়ঘর এই সিটং। গাছ উজাড় করে ফলে কমলালেবু। সিটং উপত্যকাই লেপচাদের জন্মস্থান। সম্পুর্ণ দূষণহীন অঞ্চল স্টিং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৮শ ফুট উঁচুতে রিয়াং নদীর ধারে এ এমন এক অঞ্চল, যেখানে জানলা দিয়ে মেঘ ঢুকে ঝরে পরে বৃষ্টি। আছে ঝরনা। যখন তখন উঁকি দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আছে মহানন্দা অভয়ারণ্য। আর আছে দিগন্ত বিস্তৃত চা বাগান। এনজিপি স্টেশন থেকে সিটং এর দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার এবং বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ৬৯ কিলোমিটার। থাকার জন্য আছে বেশ কয়েকটি হোম স্টে। .তুকদা

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ছিল এই শৈলশহরের তুকদায়। এখানে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে ওঠে। এখানকার ক্যান্টনমেন্টে এখনও পরাধীন ভারতের গন্ধ পাওয়া যায়। আছে ৩৬টি শতাব্দী প্রাচীন বাংলো। আর আছে বাহারি অর্কিডের বাগান। শিলিগুড়ি শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাচীন শহর তুকদা। এখানে থাকার জন্য আছে হোম স্টে। যা মধ্যত্তির সাধ্যের মধ্যেই।

লাটপাঞ্চার

এ এক অন্য দার্জিলিং। বলা হয়, এখানে প্রকৃতির প্রশ্রয়ে পাখিদের শাসন সাম্রাজ্য। অন্তত ২৪০ রকমের পাখি আছে। তারমধ্যে মধ্যে অন্যতম রুফাস নেকেড হর্নবিল। রুফাস কথার অর্থ খয়েরি ও লাল রঙের মিশ্রণ। এই হর্নবিল এখন বিলুপ্তপ্রায়। মূলত পাখিপ্রেমীদের ভিড় থাকে সারা বছর। মহানন্দা অভয়ারণ্যের কোল ঘেঁষে লেপ্টে থাকা এমনই স্নিগ্ধ  গ্রাম, যার নাম লাটপাঞ্চার। আছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো মাটির গুম্ফা। আর আছে স্তব্ধশীতল হ্রদ। প্রকৃতি এখানে এমন মায়জাল বিস্তার করে রেখেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এনজিপি স্টেশন থেকে মাত্র ৪১ কিলোমিটার এবং বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ৪৯ কিলোমিটার। থাকার জন্য আছে ছোট ছোট হোম স্টে।

করোনাকালে জায়গাগুলিকে নতুনভাবে তুলে ধরছে ইন্ডিয়া ট্যুরিজম। কলকাতায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের রিজিওনাল ডিরেক্টর সাগ্নিক চৌধুরীর কথায়, যারা বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন, আমরা চাই এবার তারা সাহস করে বেরিয়ে পড়ুন। অতিথি নিবাসগুলি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই অতিথি আপায়্যন করছে। বিশদ জানতে tourism.gov.in বা ইন্ডিয়া ট্যুরিজম কলকাতার ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলেও নজর রাখলে বেড়াতে যাওয়ার অজস্র বর্ণনা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।