কলকাতা: দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ এবং নীতিন গড়করি রাজ্যে এসে বক্তব্য দিলেন। কিন্তু কর্মী-সমর্থক নেই বললেই চলে।
একই চিত্র ধরা পড়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বিষ্ণুপুর সভায়। বাঁকুড়া কেন্দ্রে প্রায় ফাঁকা মাঠেই বক্তব্য রাখতে হয়েছে বিজেপির এই শীর্ষ নেতাকে।
একদিকে বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ বাড়ছে নিত্যদিন, অপরদিকে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতাদের জনসভায় মাঠ ফাঁকা। নির্বাচনের মুখে এসে কেন এই সাংগঠনিক দুর্বলতা? রাজ্য বিজেপির থেকে জানতে চেয়েছেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, এসব জেলায় ইতোমধ্যে তাপমাত্রা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলায় জেলায় বাড়ছে সূর্যের তেজ। এছাড়া মাঠ ফাঁকা থাকার কারণ হিসেবে দলের অপর ব্যাখ্যা বাংলাভাষী অঞ্চলে হিন্দি ভাষণ ভোটারদের খুব একটা টানছে না। কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের অনেক কথাই ভোটারদের মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
এদের বদলে তারকাখচিত প্রচারক মিঠুন চক্রবর্তী কিংবা অন্য কোনো তারকা হলে নির্বাচনী সভায় ভিড় বাড়তো। কিংবা তৃণমূলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে প্রচারক হিসেবে পাঠানো হলে কিছুটা লোক টানতো। অর্থাৎ হয় তারকা বা বাংলাভাষী নেতা না হলে পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় জেলাগুলোর মাঠ ভরানো মুশকিল। এমনটাই মত রাজ্য বিজেপির।
তবে দলের অন্য এক সূত্রে মতে, কেন্দ্রীয় নেতারা নজর দিয়েছেন শুধু রাজ্যের হেভিওয়েট নেতাদের দিকে। কিন্তু ভোট করাতে পারে এমন কর্মী সংখ্যা ময়দানে কম। এর সাথে নব্য এবং পুরাতন গোষ্ঠী কোন্দলকে দায়ী করছে ওই সূত্র। তাদের অভিযোগ প্রার্থী পদ নিয়ে অসন্তোষের প্রভাব পড়ছে নির্বাচনী জনসভায়। নেতৃত্বস্তর থেকে বার্তা না যাওয়ায় ফাঁকা মাঠেই বক্তব্য রেখে ফিরতে হয়েছে বিজেপির হেভিওয়েট নেতাদের।
আট দফা ভোটের মধ্যে মাত্র চার দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষাণা করেছে বিজেপি। কিন্তু তাতেই প্রার্থী ঘিরে চরম অসন্তোষ। খোদ কলকাতা কার্যালয়ে আছড়ে পড়ছে কর্মীদের বিক্ষোভ। প্রকট হচ্ছে জেলায় জেলায় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজের কর্মসূচি বদলে গতকালই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিলেন অমিত শাহ। ছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা।
আলোচনায় ডাকা হয়েছিল রাজ্যের ভোটের দায়িত্বে থাকা দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজ্য নেতৃত্বদের। মঙ্গলবার দিবাগত রাত পর্যন্ত চলে বৈঠক। ফলে এদিন সকালে নির্ধারিত সময় অনেক পরে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন অমিত শাহ। এমনকি পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার রাতেই দিল্লিতে ডাকা হয়েছে ভোটের দায়িত্বে থাকা দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজ্য নেতাদের।
অপরদিকে স্বস্তিতে নেই তৃণমূলও। ভোটের মুখে ফের নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে আদালতে। আদালতের নির্দেশ, যারা জামিন নিয়েছেন তাদের আবার আদালতে হাজিরা দিতে হবে। আর যারা জামিন নেননি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। জামিন না নেওয়াদের তালিকায় রয়েছে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান, আবু তাহেরসহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার নাম।
এর সাথে কয়লা ও গরুপাচার কাণ্ডে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে দলের মাথারা, যার বেশিরভাগই যুব তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত। মঙ্গলবার গরু ও কয়লা পাচারকাণ্ডে দিল্লির বসন্ত বিহার থেকে বিকাশ মিশ্রকে গ্রেফতার করেছে এনর্ফোস দপ্তর (ইডি)। গরু পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্র। তবে বিনয়য়ের সন্ধান এখনও মেলেনি। খোঁজ নেই মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝির।
সিবিআই সূত্রের খবর, তৃণমূলের যুব নেতা বিনয় মিশ্রের ব্যবসার একাংশ দেখভাল করতেন বিকাশ। কয়লা এবং গরু পাচারের টাকা বিভিন্ন হাত ঘুরে দুই ভাইয়ের মাধ্যমেই বিভিন্ন প্রভাবশালীদের বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যেত কিনা! এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতেই বিকাশ মিশ্রকে ইডি গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ