কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। শনিবার (২২ মে) আবহাওয়া দফতর সূত্রে এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এদিন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এর জেরে আগামী ২৫ মে থেকে রাজ্যে শুরু হবে বৃষ্টি। ওইদিন ৭০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়ো হাওয়া। এরপর ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে হাওয়ার গতিবেগ বাড়বে এবং ওইদিন দুপুরের মধ্যে পূর্ণশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় যশ।
তবে তার আগে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া যশ ২৪ তারিখ থেকে নিম্নচাপ চেহারা নেবে সিভিয়ার সাইক্লোনে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ সুজীব কর জানান, নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার ডায়ামিটার দাঁড়িয়েছে ১৪০০ কিলোমিটার। যা বঙ্গোপসাগরের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। কারণ এত বড় মাপের গভীর নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে সচরাচর তৈরি হতে দেখা যায়নি। এর সঙ্গে বায়ুর চাপ ঢাল এবং বায়ুর তাপ ঢাল দুটোই খুব সক্রিয়ভাবে ইন্ডিকেট করছে এটা সাইক্লোনে কনভার্ট হতে পারে। সাইক্লোনে পরিণত হলেও আগামী ৩৬ ঘণ্টা অবজারভেশন ভীষণভাবে প্রয়োজন। কারণ যেকোন মুহূর্তে গভীর নিম্নচাপ আবার ভেঙেও যেতে পারে। অর্থাৎ সাইক্লোন হলো না এমন ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে যদি সাইক্লোনে পরিণত হয় তা উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত অথবা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে।
তবে যদি পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে এই সাইক্লোন প্রবেশ করার চেষ্টা করে তাহলে এর গতিবেগ এবং শক্তি দুটোই উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ায় জলীয় বাষ্প বেড়েছে। তার ফলে আম্পানের থেকেও বেশি ভারী মেঘ তৈরি হবে। এবং বঙ্গোপসাগরের পূর্ব-মধ্য ভাগে এই নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার কারণে এর অনেকটাই শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আম্পানের থেকে কম শক্তিশালী হবে যশ।
অপরদিকে, প্রশাসনিক ভবন নবান্নের কন্ট্রোলরুম থেকেই রাজ্যের পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৫ এবং ২৬ মে, পরপর এই দুদিন তিনি থাকবেন নবান্নে। এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে। ঠিক যেমনটা তিনি করেছিলেন আম্পানের দিনগুলোয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের শীর্ষস্তরের কর্তা-সচিবরা। যশ মোকাবিলায় একাধিক প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে নবান্ন।
ইতোমধ্যে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা গেছে তাদের রোববার (২৩ মে) ফিরে আসতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে সতর্কতার জন্য মাইকিং।
করোনাবিধি মেনে ১০৫টি ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফে জেলা প্রশাসনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, ত্রিপল, বিপর্যয় মোকাবিলার সরঞ্জাম, জামাকাপড় ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে মজুতের। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনিপুর এবং দক্ষিণ ২৪পরগণার সুন্দরবনে কুইক রেসপন্স টিম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নদী বাঁধের কাজ যতটা সম্ভব শেষ করে ফেলার নির্দেশ সেচ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, ২২ মে, ২০২১
ভিএস/এইচএডি