কলকতা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সোমবার সকালে এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে চলেছে উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সংলগ্ন উপকূলবর্তী এলাকায়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা সমুদ্র সৈকত থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দূরে গভীর নিম্নচাপটি অবস্থান করছে।
লঘুচাপটি নিম্নচাপের পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ইয়াস (yaas)। এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, যার ইংরেজি হচ্ছে জেসমিন। বাংলায় যাকে বলা হয় জুঁই ফুল। এই নামটি দিয়েছে ওমান।
রোববার (২৩ মে) কলকাতা আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শনিবার তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি রোববার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড়টি।
তিনি বলেন, সোমবার থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হবে ভারী বৃষ্টি। মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে উপকূলবর্তী এলাকায় ১১০ কিমি বেগে বাতাস বইতে শুরু করবে। সঙ্গে শুরু হবে অতিভারী বৃষ্টি। এর প্রভাবে সমুদ্রের ঢেউ ২০ ফুট উঁচুতে উঠতে শুরু করবে। বুধবার যত ভূপৃষ্ঠের দিকে এগোতে থাকবে তত তার গতিবেগ বাড়বে। ওই দিন সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর গতিবেগ থাকবে ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। ফলে আগামী ২৫-২৬ মে সমুদ্র উত্তাল থাকবে।
আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’কে এখনো আম্পানের সঙ্গে তুলনা করা চলে না। আম্পান ছিলো সুপার সাইক্লোন।
গত বছর সুপার সাইক্লোন আম্পানের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই সম্প্রতি পশ্চিম ভারতে হয়ে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় তাওকতে। এরমধ্যেই আবার আসছে ইয়াস।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এরকম ঝড় সামলানোর অভিজ্ঞতা নেই। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলতে আম্পান দেখেছে রাজ্যবাসী। ১২২ কিমি বেগে কলকাতার উপর দিয়ে আম্পানের তাণ্ডবলীলা দেখেছিলো শহরবাসী। এর ফলে আম্পান থেকে শিক্ষা নিয়ে ইতোমধ্যে রাজ্যস্তরে শুরু হয়েছে একাধিক বৈঠক।
অপরদিকে, কেন্দ্রীয় স্তরের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন মোদী-অমিত শাহ। পূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি হচ্ছে কলকাতা পুলিশের বাহিনীও। প্রস্তত ভারতীয় সেনাও।
সূত্রের খবর, ইয়াস মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৮ কলাম সেনা ও একটি ইঞ্জিনিয়ার টাস্ক ফোর্সকে প্রস্তুত করা হয়েছে। উড়িষ্যার জন্য ২ কলাম সেনা ও দুটি ইঞ্জিনিয়ার টাস্ক ফোর্স প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে উদ্ধারকাজে লাগানো হতে পারে আরও সেনা। ফলে বাড়তি ফোর্স প্রস্তুত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উদ্ধারকাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীর বিপর্যয় মোকাবিলার বিমান। উত্তরপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আরও ৫টি দল।
ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় জোর দেওয়া হয়েছে মাইকিংয়ে। সতর্ক করা হচ্ছে রাজ্যবাসীকে। রাজ্যে মোট ১০৫টি সিভিআর সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। সোমবার থেকে নজরদারি চালানো হবে ড্রোন মারফত। তৈরি রয়েছে কলকাতা করপোরেশন। শহরের প্রতিটি পাম্পিং স্টেশনে কাজ বাড়ানো হয়েছে। যাতে অতি বৃষ্টিতে গতবারের মতো পানি না জমতে পারে। তবে শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশাল গাছ এবং শতাব্দী প্রাচীন বাড়ি। সেদিকেও নজর রাখতে হচ্ছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা টিমকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ