কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে বড় চমক! তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। একই সঙ্গে যোগ দিলেন তার ছেলে শুভ্রাংশু রায়।
শুক্রবার (১১ জুন) তৃণমূল ভবনে মুকুল রায়কে বরণ করে নেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
যোগদানের পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে পাশে নিয়ে বলেন, মুকুল আমাদের পুরনো পরিবারের ছেলে। ও আমাদের ঘরের ছেলে, ঘরে ফিরলো। ওকে ভয় দেখিয়ে বিজেপি নিয়ে গিয়েছিল। আমি দেখছি ওর (মুকুল) বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকেই শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। ও এসেছে ভালো লাগছে। এটা প্রমাণ হলো বাংলার কেউ বেশিদিন বিজেপি করতে পারবে না। বিজেপি একটা নির্দয় দল। মুকুল ফেরা তাই প্রমাণ করলো।
এরপর মমতা বলেন, মুকুল গাদ্দার নয়। মুকুল ভোটের সময় দল বিরোধী কোনো কথা বলেনি। তবে যারা দলের সাথে গাদ্দারি করেছে, তাদের দলে ফেরত নেবো না।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুল রায়। বর্তমানে এই পদে আছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলের হাত ধরেই মণিপুর, ত্রিপুরা এবং বিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব বিস্তার হয়েছিল। ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল। দিল্লি তার হাতে তুলে দেয় দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব। এরপরই পশ্চিমবঙ্গে বাড়বাড়ন্ত হয় বিজেপির। তৃণমূলের একের এক নেতা যোগ দিতে থাকেন বিজেপিতে। শুক্রবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেই মুকুল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন।
তৃণমূলে যোগ দিয়ে মুকুল বলেন, আমার পুরোনো ঘরে ফিরে এসেছি। আমার ভালো লাগছে। তবে এটা বলে রাখি, আগামীতে ভারতকে পথ দেখাবে বাংলা। আর তার নেতৃত্ব দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আমি কেন বিজেপি ছাড়লাম তা পরে লিখিতভাবে জানাবো।
এদিন দুপুরের পর সল্টলেকের বাড়ি থেকে তৃণমূল ভবনের উদ্দেশে রওনা দেন মুকুল রায়। অন্যদিকে প্রায় একই সময় কালীঘাটের বাড়ি থেকেও বের হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘক্ষণ মুকুলের সাথে বৈঠক হয় দলের সুপ্রিমো এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের। তারপর তৃণমূলে যোগ দেন মুকুল।
এর আগে দফায় দফায় ছেলে শুভ্রাংশুসহ ঘনিষ্ঠদের নিয়ে বৈঠক করেন মুকুল রায়। এরপরই সবাইকে চমক দিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। অন্যদিকে খবর পেয়ে, বিজেপির তরফে মুকুলের কাছে ফোন আসতে শুরু করে। কিন্তু সেই ফোন মুকুল ধরেননি বলে জানা যায়।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিবঙ্গে ২০০ আসনের টার্গেট নিয়ে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়নি। বাংলা তৃতীয়বারের জন্য ভরসা রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর। ৭৭ আসনেই থেমে যেতে হয় বিজেপিকে। এরপর বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে মুকুলের। ২ মের পর থেকে বিজেপির কোনো বৈঠকেও যাচ্ছিলেন না তিনি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে এবারের বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগর থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। জয়ী হয়ে বিজেপির বিধায়ক হন মুকুল রায়।
কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার বিজেপিকে বড় চমক দিয়ে তৃণমূলে ফেরেন মুকুল রায়। এতে বিজেপি বিরাট ধাক্কা খেলো বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেজ্ঞরা। এর পাশাপাশি বিশেজ্ঞরা মনে করছেন সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেস আরও একধাপে এগিয়ে গেলো। সে ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন মুকুল রায়।
তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায়েই প্রথম বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। আবার তিনিই প্রথম তার পুরনো দলে ফিরলেন। তৃণমূল সুত্রের খবর, লাইনে আছেন আরও অনেক বিধায়ক এবং সাংসদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ