ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

সরকারি প্রতিশ্রুতিই জয় এনে দিতে পারে মমতাকে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
সরকারি প্রতিশ্রুতিই জয় এনে দিতে পারে মমতাকে

কলকাতা: চলতি মাসের ৩০ তারিখে পশ্চিমবঙ্গে উপ-নির্বাচন। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনোকালেই নিরাশ করেনি।

তবে এবার কিছুটা হলেও চাপে আছেন তিনি। কারণ এবারের উপ-নির্বাচন শুধু নামমাত্র ভোট নয়, তার কাছে ‘ডু অর ডাই ফাইট’।  

আগামীতে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি পেতে হলে ভবানীপুরের উপ-নির্বাচন জিততেই হবে তৃণমূল প্রার্থী মমতাকে। আর সে উপলব্ধি স্বয়ং স্বীকার করে নিয়েছেন নেত্রী।  

সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের বাসিন্দাদের উদ্দেশে মমতা বলেছেন, ‘এবারের উপ-নির্বাচনের অন্য গুরুত্ব রয়েছে। ভাববেন না দিদি দাঁড়িয়েছে, তাই জিতে যাবে। সবাই ভোট দেবেন। প্রতিটি ভোট খুব দামি। আমি না জিতলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারব না। তৃণমূল সরকার চালাবে, কিন্তু অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবে। ’

তিন তিনবারের লড়াকু মুখ্যমন্ত্রীর কন্ঠে এমন আবেগী ভাষণে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন চিহ্নের জন্ম নিলেও হাল ছাড়ছে না মমতার দল। পাশাপাশি বিরোধীরা কিছুটা জমি পাবে বলে মনে করছে বিজেপি। গেরুয়া দলের মতে ভোটের আগেই শঙ্কিত মমতা। ফলে নন্দীগ্রামের ফলাফল পুনরাবৃত্তির মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। প্রার্থী করা হয়েছে প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকে। খাতায় কলমে অ্যাডভানটেজ মমতা হলেও জোর কদমে প্রচার চালাচ্ছে তারাও। কিন্তু পরিসংখ্যান কী বলছে। সত্যিই কী নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি ঘটবে ভবনীপুরে?

২০১১ সাল ছিল পশ্চিমবাংলায় পরিবর্তনের বছর। সেবার দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম জমানার পতন ঘটে মমতা হাত ধরেই। ফলে ব্যতিক্রম ছিল না ভবানীপুর কেন্দ্রটিও। ওই বছর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন দলের বর্তমানে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন নারায়ণ প্রসাদ জৈন। ৪৯ হাজার ৯৩৬ ভোটে জিতেছিলেন সুব্রত। সেবার বিজেপি প্রার্থী রামচন্দ্র জয়সওয়াল পেয়েছিলেন মাত্র ৫ হাজার ৭৮টি ভোট। গোটা বাংলার প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন মমতা। সেই সময়ে তিনি ছিলেন সাংসদ। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য উপ-নির্বাচনে লড়তে হয়েছিল তৃণমূল নেত্রীকে। এই ভবানীপুর কেন্দ্রটিকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। নন্দিনী পান ১৯ হাজার ৪শ২২ ভোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৫৪ হাজার ২শ ১৩ ভোট।

৫ বছর শেষ হতেই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও সরাসরি ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন মমতা। সেবার বাম-কংগ্রেস জোটের, কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন দীপা দাশ মুন্সি। তাকে ২৫ হাজার ৩শ ১ ভোটে হারিয়েছিলেন মমতা। বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসু।   

তারই মধ্যে ২০১৯ সালে চলে আসে ভারেতের লোকসভা ভোট। ফের মোদী হাওয়ায় জেরে ভারতে দ্বিতীয়বার শাসক দল হয়ে ওঠে বিজেপি। তার প্রভাব বাংলাতেও পড়েছিল। বাংলা থেকে ১৮ জন এমপি পায় মোদীবাহিনী। ফলে এই ভবানীপুর কেন্দ্রের চিত্রটাতেও বেশ বদল ঘটেছিল। সাতটি বিধানসভা নিয়ে গঠিত দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মালা রায়। এরমধ্যে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিও পড়ে। সেবার কড়া টক্কর দেয় বিজেপি।  

অপরদিকে জোট জিইয়ে রেখেছিল বাম ও কংগ্রেস। মালা রায় বিজেপিকে হারিয়ে মাত্র ৩ হাজার ১৬৮ ভোটে জয়ী হয়েছিল। ফলে লোকসভা ভোটের নিরিখে দিকে তাকালে ভবানীপুর কেন্দ্রের ভোটারা কিন্তু বিজেপিমুখী ছিলেন। যা এবারের উপ-নির্বাচনে মমতাকেও ভাবাচ্ছে।  

এরপরই আসে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। মমতা ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী এবং পরাজিত হন। ভবানীপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী ছিলে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। রুদ্রকে হারিয়ে শোভনদেব জেতেন ২৭ হাজার ৯শ ভোটে। বাম-কংগ্রেস-আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে তৈরি সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কংগ্রেসের সাদাব খান পান মাত্র ৫ হাজার ২১১ ভোট।  

সমীক্ষা বলছে, ৬০ শতাংশ অবাঙালি অধ্যুষিত কেন্দ্র ভবানীপুর রুদ্রকে মেনে নিতেই পারেনি। তার ক্ষোভ নাকি পড়েছিল ভোট বাক্সে। বিজেপি হারলেও নাকি ভোট মার্জিনের এতটা ফারাক হতো না। শতাংশর হিসেবে তৃণমূল পেয়েছিল ৫৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট। বিজেপি পায় ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট। আর সংযুক্ত মোর্চা পায় মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।

পরিসংখ্যান বলছে, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র ২০১১ সাল থেকে অন্তত ২৫ হাজারের কম ভোটে জেতেনি তৃণমূল প্রার্থীরা। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বরং সংখ্যাটা বাড়তে পারে। কারণ প্রার্থী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার হাতিয়ার হবে প্রতিশ্রুতি মত সরকারি অনুদানগুলো পাস করানো। ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ডের দ্বারা বিনা পয়সায় চিকিৎসা থেকে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে বিনামুল্যে চাল-ডাল। এমনকি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে বাড়ির নারীদের প্রতিমাসে ৫শ রুপি করে হাত খরচ। এ রকম আরও একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কারণে মমতাকে বিরোধীদের কাছে পরাস্ত হতে দেবে না ভবানীপুরের বাসিন্দারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
ভিএস/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।