কলকাতা: তুলতুলে নরম, ধবধবে ফর্সা গোলগাল এই একরত্তিটা বাঙালির হৃদয়জুড়ে। পরম আদরের, পরম আবেগের।
২০১৭ সালের এদিনটিতে প্রতিবেশী রাজ্য উড়িষ্যার সঙ্গে রসযুদ্ধে নেমে মমতার সরকার রসগোল্লাতে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন অর্থাৎ জিআইর স্বীকৃতি পেয়েছিল। অর্থাৎ গোটাবিশ্বে রসগোল্লার আদি বসত ভিটে একসময়ের অবিভক্ত বাংলা। আর এর জনক উত্তর কলকাতার বাগবাজারে বাসিন্দা নবীন চন্দ্র দাশ। ১৮৬৬ সালের কিছু সময়ের পর নবীন চন্দ্র দাশ রসগোল্লার সৃষ্টি করেন। যা নিয়ে বাংলায় সিনেমাও হয়েছে। ছবির নামও রসগোল্লা।
এ ধরনের একটা রসমিষ্টির জন্য মমতার সরকার উড়িষ্যার সঙ্গে কম ফাইট করেনি। দীর্ঘদিন চলছিল আইনি লড়াই। উড়িষ্যায় যুক্তি ছিল ভগবান জগন্নাথের প্রসাদীভোগ হিসেবে তারই প্রথম তৈরি করেছিল রসগোল্লা। অপরদিকে মমতার তথ্য ছিল নবীন চন্দ্রের ইতিহাস। টানা আইনি লড়াইতে জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে আদালত রায় দিয়েছিলেন বাংলার পক্ষেই। তাহলে তার জন্মদিন বা জন্ম দিবস বাংলায় উদযাপন হবে না, তা হয় নাকি!
অপরদিকে ১৪ নভেম্বর ভারতে পালিত হচ্ছে শিশু দিবস। আবার এদিনেই, এবার ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ১৩২তম জন্মদিন। এদিনেই রসগোল্লার স্বীকৃতি। তবে, রসমিষ্টি বয়সে অতি প্রবীণ হলেও স্বীকৃতির বর্ষপূর্তি হিসাবে রসগোল্লার বয়স হলো চতুর্থবর্ষ। আর তাই শুধু কলকাতাই নয়, রাজ্যের জেলায় জেলায় বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে উদযাপন করছে ‘রসগোল্লা দিবস’।
দিবসটি উদযাপন করার মূল উদ্যোগ নিয়েছে বাংলার মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘মিষ্টি উদ্যোগ’।
এই সংগঠনের সভাপতি তথা নবীনবাবুর উত্তরসূরি ধীমান দাশ বলেন, ‘বাংলার গর্ব, বাঙালির গর্ব, রসগোল্লা। আজ থেকে শুরু রসগোল্লা দিবস। এবার চতুর্থ বর্ষপূর্তি হচ্ছে বাংলার রসগোল্লার জিআই প্রাপ্তির। তবে, শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) জাঁকালোভাবে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বাগবাজারের গৌরীমাতা উদ্যান এবং রবীন্দ্রসদন লাগোয় মোহরকুঞ্জে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। সেদিন কলকাতাবাসীকে মিষ্টিমুখ করার জন্য ১০ হাজার রসগোল্লা বিতরণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ’
তবে, বর্তমান সময়ে ‘আধুনিক বাংলা’ অনেকটাই পরিবর্তন করে ফেলেছে রসগোল্লার ছানা আর রসের রসায়ন। বদলে ফেলেছেন তার বর্ণ-গন্ধ। কোথাও রসগোল্লায় কাঁচা মরিচের ঝাল, তো কোথাও ব্ল্যাক কারেন্টের উজ্জ্বলতা। পাশাপাশি আম, লিচু, তুলসি, চকলেট নানা বর্ণ-গন্ধের মিশেলে সেজেছে রসগোল্লা। কোথাও আবার তাকে পুড়িয়ে তৈরি হয়েছে ‘বেকড রসগোল্লা’। বর্তমান প্রজন্ম সেদিকেই ঝোঁক বেশি। আর তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, রসে ডোবানো দুধ সাদা রঙের গোলাকার চাঁদের মতো নরম তুলতুলে, নবীনের সৃষ্টি প্রবীণ রসগোল্লা। যাকে বাঙালি আজও ভোলেনি। আর তাই কলকাতায় উদযাপন হচ্ছে রসগোল্লার জন্মদিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
ভিএস/এএটি