কলকাতা: তিন তিনবার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখার পর ভারতের অন্যান্য রাজ্যের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বাঁধার দিকে নজর দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম দাবিদার পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।
একদিকে আসাম, ত্রিপুরা, গোয়া, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশে মোদিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরদিকে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস মমতার জোটে যুক্ত হতে একপ্রকার নারাজ। প্রকাশ্যে সোনিয়া-মমতার দ্বন্দ্ব না বাঁধলেও, মমতার কংগ্রেস ভাঙানো ভালো চোখে দেখছেন না সোনিয়া। তবে কংগ্রেসের ভবিষ্যত যে উজ্বল নয়, সে কথা মমতাও জানেন। তাই অনেক কংগ্রেস নেতাই মমতার দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখা নিয়ে মমতা বলেছেন, যারা ময়দানে নেমে লড়াই করবেন, তাদেরই সঙ্গে রাখা হবে। যদি কেউ ময়দানে নেমে লড়াই করতে না চান, আমরা কী করব? তখন আমাদের নিজেদের মতো লড়তে হবে।
অর্থাৎ মমতা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ড্রইংরুম পলিটিক্স ছেড়ে কংগ্রেস যদি মমতার হাত না ধরে তাহলে মমতার নতুন ফ্রন্ট, বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই জাতীয় দলের বিপক্ষেই দাঁড়াবে।
এরইমধ্যে আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিটি নির্বাচন। এখনও মমতা সিটি ভোট নিয়ে জনসমাবেশ না করলেও তার ভরসাযোগ্য রাজনৈতিক সৈনিক ফিরহাদ হাকিমকে পথে নামিয়ে দিয়েছেন। কলকাতার সাবেক মেয়র তথা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। নিজের ওয়ার্ডের পাশাপাশি বাকি ওয়ার্ডগুলো চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।
তবে এবারের সিটি নির্বাচনে শাসকদল বাদে বিরোধীদের সেভাবে রাস্তায় দেখা মিলছে না। বাম, কংগ্রেস, বিজেপির মতো প্রথমসারির রাজনৈতিক দলগুলোর কেন এই অবস্থা এবং কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের অন্যতম প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার? সে বিষয়ে ফিরহাদ বলেন, আমরা এককালে সবাই জাতীয় কংগ্রেস করতাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও করতেন। কিন্তু কংগ্রেসকে সেসময় দেখেছি, দলের কর্মীদের মৃত্যু হচ্ছে তখনও সিপিএমের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলতে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় স্তরে এখনো দেখছি কংগ্রেস ড্রইংরুম পলিটিক্স ছেড়ে বের হতে পারছে না। ইফ ইট ইস ভেরি হট, সো লেটস গো সিট ইন এসি। আই হ্যাভ লট অব ওয়ার্ক, এ ভ্যাকেশন ইন লন্ডন—এটাই হচ্ছে কংগ্রেস। ঠাণ্ডা ঘরে বসে যদি ভাবে বিজেপিকে হারাতে পারবে, তা কোনদিন সম্ভব হবে না। কংগ্রেস আস্তে আস্তে ডিপফ্রিজে চলে যাচ্ছে, মানে গরম লাগলে লন্ডনে চলে যাওয়ার মতো। এরা দিল্লিতে বেশি গরম পড়লেই এসিতে চলে যাচ্ছে, ড্রইংরুমে বসে রাজনীতি করছে। কী করে সম্ভব এদের পক্ষে বিজেপিকে সরানো। এভাবে বিরোধী শক্তিদের এক করতে পারবে না।
ফিরহাদ হাকিম আরও বলেন, রাস্তায় নেমে ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন মমতা ব্যানার্জি যে আন্দোলন করেছেন, মানুষের পাশে থাকা, মানুষের হয়ে কাজ করা এবং মানুষের জন্য আন্দোলন করার জন্য দিনরাত এক করে করে দিচ্ছেন। মোদি সরকারকে সরাতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন নেত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছে ভারতবাসী। মানুষের জন্য আন্দোলন এবং মানুষের মধ্যে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। না হলে মোদি সরকারকে সরানো যাবে না। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার। ২০২৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ছেড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেনই—এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ