কলকাতা: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের এলাচ পাওয়া যায় ভারতে এবং তা হয় পশ্চিমবঙ্গে। অর্থাৎ বিশ্ববাসী যাকে ‘কালো এলাচ’ বলে চেনেন, সেই সুগন্ধি বড় এলাচ চাষ হয় পশ্চিমবাংলার মাটিতেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বে আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির পরই বড় এলাচের ক্রেতা বাংলাদেশ। অন্যান্য মহাদেশেও এখান থেকেই যায় এই সুগন্ধী মশলাটি।
ভারতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের বড় এলাচের সৃষ্ঠিভূমি হল পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলা। পশ্চিম ভুটানের কাছে বাংলার সীমানার শেষ প্রান্তে রয়েছে দুটি গ্রাম। একটির নাম তাংতা, অপরটি তোডে গ্রাম। গ্রাম দুটির অবস্থান সমুদ্রস্পৃষ্ট থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট উঁচুতে। সেখানেই চাষ হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং উৎকৃষ্ট মানের এলাচ। যার গায়ের রঙ কালো। সে কারণে পশ্চিমবঙ্গে এর চলতি নাম কালো এলাচ।
যদিও ভারতের আরও কয়েকটি গ্রামে বড় এলাচের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে ভালোমানের এলাচ তাংতা এবং তোডে গ্রামেই মেলে। অনেকটা দার্জিলিং চায়ের মতো।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই এলাচের রং কালো নয়, হালকা গোলাপি। বাংলায় প্রযুক্তিগত অভাবের কারণে পুরনো পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণের সময় এই এলাচ কালো হয়ে যায়। তবে এবার সেই প্রযুক্তিগত অভাবকে বিদায় জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা গেছে, বাংলার কৃষকরা যুগের পর যুগ কাঁচা বড় এলাচ মাটির চুলায় কাঠের জালে শুকনো করেন। ওই অঞ্চলে যাকে বলা হয় ভাট্টির আগুন। সেই ভাট্টির আগুনে গোলাপি রঙের এলাচ যত শুকনো হত থাকে ততোই কালচে হয়ে যায়। শেষে রং বদলে হয়ে যেত একেবারে কুচকুচে কালো। ফলে গুণগত মানে সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এর উপযুক্ত দাম পেতেন না চাষিরা। তবে এবার পরিস্থিতিতে পাল্টাচ্ছে।
বছর দুয়েক আগে এই সমস্যার কথা জানতে পারেন মমতা ব্যানার্জি। এরপর রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তর কয়েকজন কৃষককে প্রযুক্তি শিখতে অরুণাচল প্রদেশে পাঠানো হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়, সেই রাজ্যের বড় এলাচ কালিম্পংয়ের চেয়ে ছোট এবং গুণগতমানেও সমতুল্য নয়। কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে এ বিষয়ে অরুণাচল অনেকটাই উন্নত। সেই কৌশল বাংলায় ব্যবহার করা যায় কি না, সেটি দেখতে পাঠানো হয়েছিল চাষিদের। সেসব দেখে এসে ২০ লাখ রুপি খরচ করে উন্নতমানের ‘ড্রাইং মেশিন’বসানো হয়েছে কালিম্পংয়ে। জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার। এখন মেশিনের ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই শুকানো যাচ্ছে বড় এলাচ। পাশাপাশি এর রং থাকছে অবিকৃত।
আগে বড় এলাচ শুকাতে সময় লাগত প্রায় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা। এখন মেশিনে প্রতিদিন তিন হাজার কেজি এলাচ শুকনো যায়। মূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চাষ হয় বড় এলাচ। বিক্রি হয় সারা বছর ধরে। চলতি বছর প্রথম, কালো নয় হালকা গোলাপি রঙের বড় এলাচ তৈরি হবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ৭শ থেকে ৮শ রুপি। জানা গেছে এই রোজার মাসেই কলকাতার বাজারে আসবে গোলাপি এলাচ।
এলাচ কৃষক ফ্রান্সিস রাই বলেন, এতে আমাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমাদের এখন চেষ্টা সরাসরি রপ্তানি করার। রং বদলের আগে এই এলাচের চাহিদা ছিল আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশও গোলাপি রঙের এলাচ কীভাবে পাঠানো যায় তাই দেখা হচ্ছে। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্র নাথ সিনহা জানান, নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রামের সব চাষির ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে। যেমনটা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড