কলকাতা: সোমবার কলকাতা আবহাওয়া দপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার এবং ক্রমশই ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ আরও বাড়বে। এর সাথে জানানো হয়েছে, অশনি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দূরে এবং উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী জেলা থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে উড়িষ্যার ভূপৃষ্ঠে কাছাকাছি চলে আসবে। এর সাথে আবহাওয়া দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে, অশনি উড়িষ্যার উপকূলবর্তী ভূপৃষ্ঠে আসবে না। ভূপৃষ্ঠ বরাবর সমুদ্র ধরে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোতে থাকবে।
তবে পশ্চিমবঙ্গে অশনি প্রবেশ না করলেও এর প্রভাব ইতোমধ্যে রাজ্যটিতে শুরু হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় থেকে যে মেঘপুঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টি চলবে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত।
কলকাতা আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলির মধ্যে পূর্ব মেদিনিপুর, পশ্চিম মেদিনিপুর, উত্তর ২৪পরগনা, দক্ষিণ ২৪পরগনায় মঙ্গলবা থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে।
ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত জেলা সফর বাতিল করেছেন। রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন জানিয়েছে, কলকাতা থেকেই অশনির ওপর নজর রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র সৈকতগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ১০ মে থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্র যেতে বারণ করা হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে ৫টি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রিপল, চাল, ওষুধ, শুকনো খাবার এবং পানীয় জলের বোতল মজুত রাখা হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিপথগামী এলাকায় নৌকা রাখা হয়েছে, যাতে বিপদগ্রস্তদের দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায়।
পাশাপাশি উপকূলবর্তী এলাকার দুর্গতদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে। গাছ ভেঙে পড়লে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রস্তুত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন।
কলকাতা কর্পোরেশন বিপর্যয় মোকাবিলা টিম নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। কলকাতায় সবচেয়ে বড় সমস্যা টানা তিন-চার দিন বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমতে শুরু করে।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতার নিষ্কাশন ব্যবস্থা সরাসরি গঙ্গার সাথে যুক্ত। অশনির কারণে গঙ্গার পানি বাড়লে সড়কে পানি নামতে পারবে না, ফলে এটা একটা বড় সমস্যা।
তবে এর থেকে বড় সমস্যার কারণ হলো কলকাতার প্রচুর গাছ, শতাব্দীপ্রাচীন গাছের সংখ্যাও কম নয়। টানা কয়েকদিন সড়কে পানি জমে থাকায় গাছের গোড়া নরম হয় পড়ে যায়। আর তাতেই শহরের সড়কে বড় যানজটের সমস্যা হয়। সেদিকেই বিপর্যয় মোকাবিলা টিমকে বাড়তি নজর রাখতে জানিয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন। যাতে বড় কোনো গাছ পড়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যে কেটে রাজপথ পরিষ্কার করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ