কলকাতা: করোনা মহামারির পেরিয়ে দীর্ঘ তিনবছর পর ভারত সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়াদিল্লি সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। যার মধ্যে থাকছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। থাকবেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। ফলে এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে ভারতও। সে কারণে গোটা ভারতে চলছে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে বাড়তি নিরাপত্তার বলয়ে মোড়া হয়েছে দেশটির রাজধানী। চারিদিকে একটা সাজো সাজো রব।
যদিও এ সফরে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ যাচ্ছেন না। তার পরও সেখানে উৎসাহও তৈরি হয়েছে।
একসময় আন্দবাজারের কর্মরত সুখরঞ্জন দাশগুপ্তর মতো ব্যক্তিত্বরা কী ভাবছেন? নানান সমালোচনা, আলোচনায় শেষ মুহূর্তে তুলে ধরলেন একাধিক বিষয়।
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত মুক্তিযোদ্ধা পদকপ্রাপ্ত ভারতীয় সাংবাদিক। এক সময় আনন্দবাজার পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে বৈঠক করতে চলেছেন, এই বৈঠকের গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই বৈঠকটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। এই বৈঠকে যাওয়ার আগে ঢাকা-দিল্লি যে চুক্তিগুলো হবে সেই চুক্তির ড্রাফট অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে। আমি আন্তর্জাতিক কাজ করেছি বলে আমার ধারণা আছে, ইতিমধ্যে সেই সব চুক্তি দুই দেশের সরকার সম্মতি দিয়ে ফেলেছে। '
‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, কারো কথা শুনতে রাজি নন। তিনি নিজ দেশের স্বার্থ দেখছেন। মনমোহন সিং থেকে বর্তমান সরকার চেষ্টা করে গেলেও বঙ্গেশ্বরীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জেদের কারণে একটি চুক্তি হচ্ছে না। ’
শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক শুভেচ্ছা বার্তায় মমতাকে বলেছিলেন, ভারত সফরে দিল্লিতে মমতার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে এই সফরে সরকারিভাবে কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, দুই দেশের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এটা পাঠকদের বুঝতে হবে। এটা যে তিনি সম্মতি দেবেন না ২০১০ সাল থেকে মমতা ঠিক করে নিয়েছেন। আর ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় চলার কারণে তিস্তাসহ দেশের অনেক আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমি মনে করি, বাংলাদেশিরা এটা এখন বোঝেন। এটা বিরোধীদের ভোটের ইস্যু হতে পারে। এছাড়া অন্য কিছু নয়। ভোট তো আভ্যন্তরীণ বিষয়। শাসক দলের সাথে এ বিষয়ে বিরোধীরাও কেন এগিয়ে আসে না? এটা রাষ্ট্রের বিষয়। দেশের বিষয় হওয়ার কারণে সবসময় একসাথে লড়া উচিত। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট পাগল। দেশ জিতলে দুই দল কি আলাদা করে সাপোর্ট করে নাকি হারলে আলাদা করে কষ্ট পায়। তা হয় না! অর্থাৎ দেশীয় বিষয় একসাথে এগিয়ে উচিত। ভারতের দিকে তাকান। সব রাজনৈতিক দল এক অপরকে কাদা ছুড়ছে। যখন দেশ, বিরোধী রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন সব দল এক হয়ে যায়। বাংলাদেশের জনগণ এখন এসব বোঝে। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বক্তব্যের বিষয়ে দাশগুপ্ত বলেন, ‘সরি টু সে, ইটস অ্যাবসুলেটলি আন-ডিপ্লোমেটিক টক। অতীত নিয়ে বলবো না, তবে বর্তমান বাংলাদেশকে রক্ষা করতে ভারতের প্রয়োজন হয় না। একটা জিনস বুঝতে হবে আপনাদের, ভারতের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অখণ্ড ভারতবর্ষ ভূমিকা রেখেছে, তারপর পাকিস্তানের সাথে লড়াই, স্বাধীনতার মর্ম বুঝতে না বুঝতেই বঙ্গবন্ধু হত্যা, হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা এবং একাধিকবার বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার পরিকল্পনা। এই অস্থিরতায় মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ তার উন্নতি ধরে রাখতে পেরেছে এবং আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এটাই তো বড় বিষয়। আপনি যদি ভারতের স্বাধীনতার দশ বছর পর দেখেন আর এখন ৭৫ বছর পরে তার অগ্রগতি দেখেন তাহলেই ধারণা করতে পারবেন। অর্থাৎ একটি দেশের স্থিতিশীল অবস্থা থাকতে হবে। ’
‘আমরা ভারতীয়রা সব সময় চাই বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় থাকুক। বঙ্গবন্ধু যে সংবিধানে সই করে গেছেন, যে সংবিধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ০৪, ২০২১
ভিএস