ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

দলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেঁচো

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১০

চোখ না থাকলে দুনিয়া অন্ধকার। যার চোখ নেই সে এই দুনিয়ার কোনো কিছুই দেখতে পায় না।

নীল আকাশ কিংবা গাছের সবুজ পাতা তার কাছে থেকে যায় চির অচেনা। তারপরও পৃথিবীতে চোখহীন প্রাণীর সংখ্যা কম নয়। আর এই Earthwormsকাতারে কেঁচো অন্যতম। দৃষ্টিহীন, হাড়গোড়হীন বিশেষ শারীরিক গঠনের এই কেঁচো নিয়ে বিজ্ঞানীদের তাই কৌতুহল আর গবেষণারও অন্ত নেই। এতদিন ভাবা হতো কেঁচো অসামাজিক প্রাণী এবং এরা দলবদ্ধভাবে থাকে না, একে অন্যের ভাষাও বোঝে না। কিন্তু বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব লেইজির একদল গবেষক সম্প্রতি আবিস্কার করেছন, কেঁচো সামাজিক প্রাণী এবং ওরা একে অপরের ভাষা বোঝে। আর সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় ওরা দলগত সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, স্পর্শের মাধ্যমে এক কেঁচো অন্য কেঁচোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং শারীরিক আচরণের মাধ্যমে পরস্পরকে প্রভাবিত করে। আর পিঁপড়া, উইপোকা কিংবা মৌমাছি যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারে, ঠিক তেমনি কেঁচোও দলবদ্ধভাবে গন্তব্য নির্দিষ্ট করে এবং সেই অনুযায়ী পথ চলে।

এছাড়া এক প্রজাতির কোঁচোর মধ্যে তারা লড়াকু মনোভাবেরও পরিচয় পেয়েছেন। গবেষক দলের প্রধান পিএইচডির ছাত্রী লারা জিরবেস বলেন, ‘কেঁচোদের মধ্যে সামাজিক আচরণ নেই এমন ধারণা বদলে দিয়েছে আমাদের গবেষণা। এই প্রাণীর সামাজিকতা আমরা মৌমাছির সঙ্গে তুলনা করতে পারি। ’

মিস জিরবেস এবং তার সহকর্মীরা সত্যিকারভাবে কৌতুহলী ছিলেন মাটির নিচের অন্যান্য অতিক্ষুদ্র অনুজীবের স্পর্শে কেঁচো কী ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায় সেই বিষয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, কেঁচো যেভাবে নিচের মাটি উপরে তুলে নিয়ে আসে তা সেই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ারই অংশ। ওরা যখন কাদা মাটির বাইরে দল বেঁধে থাকে তখন একে অন্যের শরীর পেঁচিয়ে দলা পাকিয়ে অবস্থান করে। আর তখন ওদের শরীর থেকে এক ধরণের পিচ্ছিল তরল নিঃসৃত হয়। আত্মরক্ষার জন্যই হয়তো ওরা এ কাজ করে অথবা এটা হতে পারে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার কৌশল।

কেঁচো একা একা পথ চলে না বরং দলবদ্ধভাবে চলার সময় নেতার অনুসরণ করে। বনের কাদামাটির অল্প গভীরে বাস করে এমন প্রজাতির কেঁচো পরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েছিলেন গবেষকরা। প্রথমত তারা  ৪০টি কেঁচো একটি মূল গর্তে রাখেন যেটার দুইদকে পথ খোলা ছিল। উদ্দেশ্য ছিল কেঁচোগুলোকে একা একা চলে যেতে দেওয়া এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোন পথে কতগুলো কেঁচো চলে যায় তা পরীক্ষা করা। বিষয়টি ত্রিশবার পরীক্ষা করা হয়, প্রত্যেকবারই দেখা যায় ওরা দলবদ্ধভাবে একটি পথেই বের হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রথম কেঁচো যে পথ ব্যবহার করে বাকিরাও সে পথ ব্যবহার করে।
আচরণের সাহায্যে ওরা কীভাবে অন্যদের প্রভাবিত করে সে পরীক্ষায় দেখা যায়, ওরা এক্ষেত্রে শরীর থেকে বের করা তরল অথবা স্পর্শের মাধ্যমে একে অন্যকে জানিয়ে দেয় এখন কোথায় যেতে হবে।

দুটি কেঁচো যখন একসঙ্গে চলে তখন দেখা যায় একটি অন্যটিকে অনুসরণ করছে। এক্ষেত্রে দেখা য়ায় প্রায় সময়ই একটি অন্যটির শরীর স্পর্শ করে। খাবারের সন্ধান পেলেও ওরা একজন আরেকজনের দেখিয়ে দেওয়া পথ অনুসরণ করে। গবেষকরা ধারণা করছেন, অন্য প্রজাতির কেঁচোর আচরণও সম্ভবত একই।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।