ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে ছন্দপতন!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে ছন্দপতন!

ঢাকা: মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটেছে। এক মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে সাত লাখ।

ওয়াইম্যাক্স, আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও আগের মাসের তুলনায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে ৯ লাখ।
 
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ নভেম্বর মাসের প্রতিবেদনের সঙ্গে গত মাসের তথ্যের পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
 
এতে আরও জানা যায়, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটেছে।
 
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সাময়িক বন্ধ থাকায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে এ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
 
আবার মোবাইল সিম নিবন্ধনের উদ্যোগও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় হ্রাস পেতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
 
আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের বড় কোনো প্রভাব মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে পড়েনি।
 
নভেম্বর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪১ হাজার। গত মাসে তা ছিল ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার। আর সেপ্টেম্বর মাসে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার।
 
আগের দু’মাসের তুলনায় নভেম্বরে কমেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে এ সংখ্যা বেশি।

বিটিআরসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বরে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫ কোটি ১৪ লাখ ৬৮ হাজার। গত মাসে পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার, আর সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ কোটি ১৯ লাখ ৮২ হাজার।
 
৯০ দিন সক্রিয় থাকার হিসেবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিটিআরসি।
 
বিটিআরসি’র প্রতিবেদনে নভেম্বরে ওয়াইম্যাক্স গ্রাহক ১ লাখ ৫৪ হাজার। গত মাসে ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার, সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৬৫ হাজার।
 
নভেম্বরে আইএসপি ও পিএসটিএন গ্রাহক ২৩ লাখ ১৮ হাজার। গত মাসে তা ছিল ২১ লাখ ৬৮ হাজার আর সেপ্টেম্বরে গ্রাহক ছিল ১৯ লাখ ১১ হাজার।
 
ইন্টারনেট সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের কারণ হতে পারে।
 
গত ১৮ নভেম্বর সরকার ফেসবুকসহ ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হওয়ার ২৩ দিনের মাথায় ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দেয় সরকার। আর ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, লাইন, ট্যাঙ্গো, হ্যাঙ্গআউট, স্কাইপি, ইমো এবং টুইটার খুলে দেওয়া হয় ১৪ ডিসেম্বর।
 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় ডাটা ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমেছিল বলে ওই সময় জানিয়েছিল ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আর মোবাইল অপারেটরগুলোও রাজস্ব ক্ষতিতে পড়ে সে সময়।
 
ফেসবুক বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব তরুণদের মধ্যে পড়তে পারে। তাই অনেকে ব্যবহার করেননি বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটা প্রভাব রয়েছে। কারণ, ইন্টারনেট এবং এর সেবাগুলো জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
 
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. কায়কোবাদ বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধের প্রভাব থাকতে পারে।
 
এছাড়াও মোবাইল সিম নিবন্ধনের উদ্যোগ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমার পেছনের কারণ হতে পারে বলে জানান মোস্তফা জব্বার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেকে অনিবন্ধিত সিম হয়তো ব্যবহার করছেন না।
 
ড. কায়কোবাদ এ বিষয়ে বলেন, যার নামে নিবন্ধন, অপরাধ করলে তার মধ্যে ভয় কাজ করবে। এজন্য অনিবন্ধিত সিম বন্ধ হতে পারে। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমবে- এটাই স্বাভাবিক।
 
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের ‘বড় প্রভাব’ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেই, কিছুটা হতে পারে। বিভিন্ন সময়ে আইএসপি ও অন্যান্য ইন্টারনেট সেবাদানকারী গ্রাহক কম-বেশি হতে পারে।  
 
মোবাইল গ্রাহক ১৩ কোটি ৩১ লাখ
নভেম্বর মাসের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি মোবাইল অপারেটরের মোট গ্রাহক ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার। অক্টোবর মাসে দেশে ছয়টি মোবাইল অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার।
 
এর মধ্যে নভেম্বরে গ্রামীনফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার, গত মাসে ছিল ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার। এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ৫ লাখের বেশি।
 
বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার, গত মাসে ছিল ৩ কোটি ২৫ লাখ ৯৯ হাজার।
 
রবি’র গ্রাহক ২ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার, গত মাসে ছিল ২ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার।
 
এয়ারটেল গ্রাহক সংখ্যা নভেম্বরে কোটি ছাড়িয়ে ১ কোটি ৩ লাখ ৪৫ হাজার হয়েছে, গত মাসে চিল ৯৯ লাখ ৮২ হাজার।
 
গ্রাহক কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ব অপারেটর টেলিটক ও বেসরকারি অপারেটর সিটিসেলের। নভেম্বরে সিটিসেলের গ্রাহক ১০ লাখ ৩৪ হাজার, গত মাসে ছিল ১০ লাখ ৮৯ হাজার।
 
আর টেলিটকের গ্রাহক নভেম্বরে ৪০ লাখ ৫৭ হাজার, গত মাসে ছিল ৪১ লাখ ৪১ হাজার।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।