ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ধুম বেচা-কেনায় শেষ হলো স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
ধুম বেচা-কেনায় শেষ হলো স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলা ছবি: রানা / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আকর্ষণীয় ছাড়ে-উপহারে ব্যাপক কেনা-বেচায় শেষ হলো তিনদিনের স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলা। পাশেই দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক উৎসব ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা’ চললেও প্রযুক্তপ্রেমী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জমজমাট উপস্থিতিতে শেষ দিনের এ মেলা প্রাঙ্গনটি হয়ে ওঠে জনাকীর্ণ।


 
ব্যবহারকারীদের সর্বাধুনিক সংস্করণের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার দেখার, কেনার সুযোগ করে দিতে বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) শুরু হয় তিন দিনব্যাপী গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলা।
 
শনিবার (০৯ জানুয়ারি) ছিল এ মেলার তৃতীয় ও শেষ দিন। প্রয়োজনীয় বা সখের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিনতে -দেখতে  স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিআইসিসি’তে। সে সুযোগে মোবাইল ফোন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও আকর্ষণীয় ছাড়ে-উপহারে বিক্রি চালিয়ে যায় মেলা শেষ হওয়ার একেবারে শেষ মূহুর্তটি পর্যন্ত।
 
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বিকেল গড়াতে না গড়াতেই অস্বাভাবিকভাবে ভিড় বেড়ে যায়। টিকিট বুথের সামনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। আর এদিকে কার্নিভাল হলের মেলা প্রাঙ্গন মুখর হয়ে ওঠে বিক্রেতা কর্মীদের হৈ-হুল্লোড়ে। এ হৈ-হুল্লোড়ে কেনা-বেচার ভিড় চলে মেলার শেষ পর্যন্ত।
 
মেলায় কিস্তিতে আইফোন ৬এস ও ৬এস প্লাস বিক্রি করেছে মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। মেলা উপলক্ষে মোবাইল ফোন অপারেটরটি তাদের স্টার গ্রাহকদের মাসিক ২৫৬৩ টাকা এবং সাধারণ গ্রাহকদের ৫১২৫ টাকা কিস্তিতে আইফোন কেনার সুযোগ দিয়েছিলো।
 
মেলায় গ্রামীণফোনের বিশেষ এই অফারে গ্রাহকরা অ্যাপলের এক বছর মেয়াদি ওয়ারেন্টি এবং হেভি ডিউটি ননস্টপ ইন্টারনেট প্যাকেজে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়।
 
তিন দিনের গ্রামীণফোন ও ট্যাব মেলায় উম্মোচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভিআর ডিভাইসটি নিয়ে আসে স্যামসাং। বিশেষ ডিভাইসটি নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি ছিলো না। মেলার প্রথম দিনে স্যামসাং গিয়ার ভিআর হেডসেটে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উপভোগ করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ক্রিকেট তারকা মুশফিকুর রহিম।
 
১টি মেগা প্যাভিলিয়ন, ৮টি প্যাভিলিয়ন, ৫টি মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ১০টি স্টলে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বশেষ প্রযুক্তি ও মডেলের ডিভাইস প্রদর্শনী ও বিক্রি করেছে।
 
গ্রামীণফোন ছাড়াও মেলার সহ পৃষ্ঠপোষক ছিল এলিট, হুয়াওয়ে, স্যামসাং ও সিম্ফনি।
 
মেলা উপলক্ষে গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব এক্সপোর অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে ‘এসটিই কুইজ কনটেস্ট ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বিজয়ীরা পান স্যামসাং, আসুস জেনফোন ২, এলিট মোবাইল ও হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে স্মার্টফোন।
 
প্রচুর স্মার্টফোন-ট্যাব বিক্রি করে যেমন খুশি বিপনণকারীরা, তেমনি বিশেষ ছাড় আর আকর্ষণীয় উপহার পেয়েও খুশি ক্রেতারা। আর ক্রেতাদের একটি বৃহৎ অংশ বয়সে তরুণ হওয়ায় মেলায় তাদের উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধভাঙা।
 
দেশীয় মোবাইল ব্র্যান্ড গোল্ডবার্গের প্যাভিলিয়ন থেকে ‘জেপ এফএক্স-১’ মডেলের স্মার্টফোন কিনে সুজুকির বাইক জিতে আত্মহারা একটি বায়িং হাউজে কর্মরত রাজধানীর উত্তরার মিজানুর রহমান।
 
৬ হাজার ৯৯০ টাকা মূল্যের স্মার্টফোন কিনে এতো বড় উপহার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলানিউজকে মিজানুর বলেন, আসলে আমি আশা করিনি। ভাগ্যে আছে তাই পেয়ে গেলাম। তাছাড়া কম দামের মধ্যে একটি স্মার্টফোন কিনতেই মেলায় আসা। উপহার পাওয়াটা অবশ্যই আনন্দের! আবার সেটা যদি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত, তবে তো সেটা আরো বেশি আনন্দের! আমি খুবই খুশি!!!
 
মিজানুর রহমানের মতো এত বড় উপহার না পেলেও বিশেষ ছাড়ে পছন্দের স্মার্টফোনটি কিনতে পেরে জারপরনাই খুশি কিশোর আরহাম শিকদার। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমন বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড আসুস’র ‘জেডই৫০০কেজি’ মডেলের স্মার্টফোন কিনেছে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের স্টল থেকে।
 
বাজার মূল্যের চেয়ে এক হাজার টাকার ওপরে ছাড় পাওয়ার পাশাপাশি সুমন পেয়েছে একটি টি-শার্ট। উপহার ছোট হলেও স্মার্টফোন হাতে পেয়ে সুমনও অনেকটা আত্মহারা মিজানুরের মতোই।
 
প্রতিক্রিয়ায় সুমন জানায়, শুরুর দিন মায়ের সঙ্গে মেলায় এসে পছন্দ করে গিয়েছিল। শুক্রবার (০৮ ডিসেম্বর) ছোট বোনের জন্মদিন থাকায় আসতে আসা হয়নি। আজ আবার মায়ের সঙ্গে এসেই সে মোবাইল কিনেছি।
 
মেলা কেমন লেগেছে জানতে চাইলে ছোট্ট করে সুমনের উত্তর, অনেক ভালো।
 
‘এ ধরনের মেলায় সুবিধা হলো অনেকগুলো ব্র্যান্ডকে আপনি এক জায়গায় পাচ্ছেন। ফলে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে একটি ব্র্যান্ডের পণ্যের সঙ্গে আরেকটি ব্র্যান্ডের পণ্যের তুলনা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তুলনামূলক ভালো যেটা মনে হয়, সেটাই কেনা যাচ্ছে। এই যেমন আমি কিনতে এসেছিলাম স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম দামে কেনা হলো হুয়াই’র ফোন’।  
 
বছরে অন্ততঃ দু’বার এ ধরনের মেলার আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে এভাবেই বাংলানিউজের কাছে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন রাজধানীর ঝিগাতলায় বসবাসকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের ছাত্র কামরান পারভেস।  
 
আজিমপুর এলাকায় বসবাসকারী করবী মানসী ধর। একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বই পড়ার নেশা বলা যায় উচ্চ মাধ্যমিক থেকে। স্মার্টফোন-ট্যাব মেলায় এসেছেন ট্যাব কিনতে। কারণ একটাই, বড় ডিসপ্লে। ডাউনলোড করা ই-বুকগুলো পড়ে শেষ করা। ব্যাটারির ভালো ব্যাকআপ পাওয়া যাবে এমন ট্যাবই খুঁজছেন।
 
কিনছেন না কেন? প্রশ্নের এক কথায় উত্তর, ‘দেখছি। পছন্দ-সঙ্গতি এক হলেই কিনে ফেলবো’। তবে ভিড় বেশি বলে কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করে বললেন, এ ধরনের মেলা আরেকটু খোলামেলা জায়গায় হওয়া উচিৎ।
 
এদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার পাশে এবং একই সময়ে এ মেলার আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক স্মার্টফোন-ট্যাব পরিবেশক ও বিপনণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। একটি বৃহত্তর আয়োজনের একেবারে কাছাকাছি আরেকটি আয়োজন কোনোভাবেই যায় না। সেটিও আবার হলরুমের ভেতরে।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লেনেভো ব্র্যান্ডের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে যে মেলাটা হয়েছিল, তার চেয়ে এবারের মেলায় বিক্রি অনেক কম হয়েছে। এখানে যতো ভিড় দেখছেন, তাদের অধিকাংশই বাণিজ্যমেলার ক্রেতা-দর্শনার্থী। তাছাড়া সামনে যদি বড় আয়োজন থাকে তাহলে পেছনের দিকে কেউ তাকান সেভাবে?
 
বিক্রি কম হলেও এ ধরনের মেলা বা প্রদর্শনী দেশে প্রযুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গ্লোবাল ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন সেলিম আহমেদ বাদল।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিক্রি কম হলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের আয়োজন প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে প্রভাব রেখে যায়। সারা বছর আমরা সেটার ফল পাই। বিক্রি এ ধরনের আয়োজনের মূল কথা না।
 
তবে এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে দেশীয় মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গোল্ডবার্গের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা রাসেল আহমেদ বলেন, সবার ক্ষেত্রে এ কথা ঠিক না। আমরা যারা দেশীয় ব্যান্ড প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি, মেলা পরবর্তী এর ফিডব্যাক তেমন পাচ্ছি না।       
 
তবে বাণিজ্যমেলা চলাকালে এ ধরনের মেলার আয়োজন না করার পক্ষেই অনেকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তিনি।
 
মেলার সমন্বয়ক নাহিদ হাসনাইন সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের আয়োজন কেবল ছাড়-উপহার দিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার আয়োজন না। এর আরেকটি উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সব ডিভাইস তুলে ধরা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ করে দেওয়া।
 
তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজনের ফলে দেশে প্রযুক্তিমনস্কতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তি সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি একটি বৃহৎ বাজারও তৈরি হচ্ছে। সব দিক থেকেই তা ইতিবাচক।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
এমএইচপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।