ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

মোবাইল অপারেটরদের প্রতারণার প্রতিকার চান গ্রাহকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
মোবাইল অপারেটরদের প্রতারণার প্রতিকার চান গ্রাহকরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অপারেটরদের কল ও ডাটার মূল্য কমানো, গ্রাহকদের প্রতারণা ও হয়রানি থেকে মুক্তি, অযাচিত এসএমএস বন্ধ এবং নেটওয়ার্ক সেবার মান আরও বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন মোবাইল গ্রাহকরা।

ঢাকা: অপারেটরদের কল ও ডাটার মূল্য কমানো, গ্রাহকদের প্রতারণা ও হয়রানি থেকে মুক্তি, অযাচিত এসএমএস বন্ধ এবং নেটওয়ার্ক সেবার মান আরও বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন মোবাইল গ্রাহকরা।
 
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গণশুনানিতে অংশ নিয়ে এসব দাবি জানান তারা।


 
বিটিআরসি’তে প্রায় এক হাজার তিনশ’ জন আবেদন করলেও চার শতাধিক আবেদনকারীকে ডাকা হয় শুনানিতে। বিকেল পৌনে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত গণশুনানিতে সাংবাদিকসহ অংশ নেন প্রায় দুইশ’ জন। তবে অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেয়েছেন ৩৪ জন।
 
গণশুনানিতে মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো প্রতিনিধিই অংশ নেননি।
 
মোবাইলে কথা বলার সময় দুর্ঘটনায় নিহত গ্রাহকদের ইন্স্যুরেন্স দাবি করেন মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
 
৪৯, ৭৯ টাকার মতো বিভিন্ন প্যাকেজ রিচার্জ অফার দিয়ে রি-টেইলাররা কোটি কোটি টাকা কেটে নিচ্ছে অভিযোগ তুলে এ ব্যাপারে বিটিআরসি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন মহিউদ্দিন।
 
মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু বলেন, প্রথমে টেলিটকের থ্রি-জির অনুমতি দেওয়া হলেও নেটওয়ার্ক উন্নত না করায় বিদেশি কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে। তিনি টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নত করার দাবি জানান।
 
সিটিসেল বন্ধ হয়ে গেলে সেই গ্রাহকদের সমস্যায় দায় কে নেবে- প্রশ্ন তুলে কনজুমার রাইটসের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রি রফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রকে এর দায় নিয়ে টেলিটকের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
 
অপারেটরগুলোকে ভগ্নাংশের রেট বন্ধ, দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিজ্ঞাপন না দেওয়ার অনুরোধ জানান রফিকুল।
 
নিজের একটি রবি সিম থাকলেও বিদেশ সফর থেকে ফিরে এসে তা না পাওয়ার কথা জানিয়ে গ্রাহক আবুল হাসনাত বলেন, ‘বিদেশ থেকে এসে দেখি, আমার নম্বরটি আর নেই। যে কাগজপত্র ছিল তা দিয়ে তা তুলতে পারিনি’।
 
বিলকিস ইরানী বলেন, ‘আমার বাংলালিংক পোস্ট পেইড নম্বর ছিল। সিম কেনার সময় ক্রয়মূল্যে ৬০০ টাকা বান্ডেল হিসেবে দেবে বলেও তা দেয়নি। এ সিমে ৭০০ টাকা লিমিট পার হয়ে গেলে আউট গোয়িং এর পাশাপাশি ইনকামিংও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’।
 
সকল অপারেটরের কলরেট প্রতি মিনিট ৫০ পয়সা করা এবং শর্ত আরোপ করে অযাচিত প্যাকেজ বন্ধ করার দাবি জানান মোবাইল ফোন ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচ এম বদরুদ্দোজা।
 
সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম সজল ডাটার চার্জ নতুন করে ঠিক করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো অপারেটরেরই ১০, ১২ টাকার বেশি অফার থাকা উচিত নয়।
 
রফিকুল ইসলাম প্রত্যেক কোম্পানিকে একই মানের কলরেট নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে মেলার নামে যত্রতত্র সিম বিক্রি বন্ধে বিটিআরসি’র হস্তক্ষেপ চান। টেলিটক সিমে ইমার্জেন্সি রিচার্জ চালু করারও অনুরোধ জানান তিনি।
 
মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধি না থাকায় শাকের আলী বলেন, এখানে সবাই উপস্থিত থাকলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতো।
 
গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আবুল বারকাত বলেন, তাদের কাস্টমার কেয়ারের সেবা কতো নিচে নেমেছে, তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না।

তার একটি সিমের সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, বার বার বলা হয়েছে, টেকনিক্যাল কাজ চলছে। ১৫ মাসে সিম রি-সাইকেল করলে তার দায়ভার কে নেবে- প্রশ্ন তোলেন বারকাত।

ভালো ভালো নম্বরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে প্রচলিত মূল্যে সেগুলো বিক্রির আহ্বান জানান তিনি।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উম্মে কুলসুম নিজের হলের রুমে বাংলালিংক ও এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক না থাকা নিয়ে অভিযোগ করে সে ব্যাপরে হস্তক্ষেপ চান।
 
গ্রাহক জাকির হোসেন বলেন, এখনও কোম্পানিগুলো ভুয়া নিবন্ধন করে সিম বিক্রি করছে। ভুয়া নিবন্ধন দিয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের শান্তি বিনষ্ট করছে। এটা বন্ধ করতে হবে।
 
মোহাম্মদ আলী টেলিটককে সক্রিয় রাখা এবং সিটিসেলের গ্রাহকের কী অবস্থা হবে, জানতে চান বিটিআরসি’র কাছে।
 
ছাত্রদের জন্য ৫০ টাকায় ১ জিবি ডাটা প্যাকেজ চান এক ছাত্র।
 
ছয়মাসে অনেক সমস্যার সমাধান
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী ছয়মাস পরে আবারও গণশুনানি হবে। তখন অনেক সমস্যার সমাধান পাবেন’।
 
অপারেটরদের সেবার মান ঠিকমতো নজরদারি করতে যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে একটি পৃথক ল্যাব করা হবে।
 
বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খান বলেন, ‘গ্রাহকদের প্রতিটি অভিযোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপারেটরদের ধোঁকাবাজির কোনো জায়গা থাকবে না’।
 
বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এমদাদ উল বারি বলেন, ‘গ্রাহককে টাকা দিয়ে অফারের এসএমএস দেওয়া যায় কি-না, সে প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। গ্রাহকরা যেন এসব এসএমএস ইচ্ছামতো বন্ধ করতে পারেন, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে’।
 
লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার জহিরুল হক, ও শিহিদুজ্জামান, স্পেকট্রাম অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক কর্নেল (অব.) নাসিম পারভেজসহ বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।