ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সংশোধিত বাজেটে যা চান আইসিটি পেশাজীবীরা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২১
সংশোধিত বাজেটে যা চান আইসিটি পেশাজীবীরা

ঢাকা: ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পর এবার অপেক্ষা সংশোধিত বাজেটের। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও পরামর্শ-আহ্বান বাস্তবায়ন হবে এমন আশায় মুখিয়ে আছেন সবাই।

তেমনি প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিট) খাত সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরাও চান তাদের দাবি-দাওয়ার বাস্তবায়ন।

দেশের আইটি ও আইসিটি খাতের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেটের দাবি জানিয়েছে আইটি-আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিস। বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তাকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এবং দেশের বেসরকারি আইটি ইন্ডাস্ট্রির সম্প্রসারণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছে সংগঠনটি।   

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য ব্যবসাবান্ধব বাজেটের দাবি

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সংশোধিত বাজেটে বেশ কয়েকটি বিষয়ই খুব দারুণ যার জন্য সরকারকে প্রশংসা করতেই হয়। ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিংকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে কর মওকুফ করা হয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক। তবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি ইন্টারনেট সেবাকে আইটিইএসের আওতাভুক্ত করা, যেটা এবারের প্রস্তাবিত বাজেটেও করা হয়নি। উপরন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের করের আওতায় আনা হয়েছে। আবার আমরা ডিজিটাল লেনদনকে উৎসাহিত করার কথা বলছি কিন্তু মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ওপর করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এ ধরনের কিছু বিষয় আছে যেটা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্বপ্নের স্রোতের বিপরীতে যায়। আমরা চাই সংশোধিত বাজেটে এ বিষয়গুলোর ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটুক।

তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনাও বাজেটে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ২৫টি প্রশিক্ষণকে আয়কর অব্যাহতির আওতায় আনা হলেও আইটি প্রশিক্ষণকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সরকার সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং আইসিটি খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাবসমূহ বাজেট অধিবেশনে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করবে এবং সত্যিকার অর্থে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট জাতিকে উপহার দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

অন্যদিকে বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেটে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো)।  

বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেট সহায়তার আহ্বান বাক্কোর

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, আইসিটি খাতের মধ্যে সব থেকে সম্ভাবনাময় এ শিল্পের পরিধি আরও বাড়াতে এবং করোনার কারণে হওয়া ক্ষতি সামাল দিতে সরকারের প্রণোদনা প্রয়োজন।

বাক্কো-এর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, এ খাতের উন্নয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একইসঙ্গে আইটি নির্ভর এ সেবার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বাক্কোর দেওয়া প্রস্তাবটি ছিল সেটি আমলে নেওয়া হয়নি। বিপিও খাতের উন্নয়নে এবং সম্প্রসারণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর এ কর থেকে অব্যহতি দেওয়া না হলে গ্রাহকের চাহিদাকৃত সেবা বাবদ ব্যয় আরও অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং আরও অনেক গ্রাহকদের বিপিও সেবা গ্রহণে অনুৎসাহিত করবে। এছাড়া বিপিও শিল্পের উন্নয়ন এবং গবেষণা ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারের কাছে ৩০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে বাক্কো।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে বিদেশে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে এ খাতের যেখানে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাজার ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়াতে পারে। এর জন্য বিপিও শিল্পের উন্নয়নে গবেষণার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ৩০০ কোটি টাকা তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছি আমরা। সংশোধিত বাজেটে এসব দাবি দাওয়ার প্রতিফলন ঘটলে এবং সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলে এ খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

অন্যদিকে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে দেখিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর করের অতিরিক্ত আরেকটি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা।  

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, করোনায় দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি সচল রাখতে কাজ করেছে যেই অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তারা, সেই ই-কমার্স খাতই বাজেটের নিগৃহীত। একদিকে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে উৎসে কর কর্তন এর কর্তৃপক্ষ করে বুদ্ধি করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর করের অতিরিক্ত একটি বোঝা দেওয়া হলেও ট্রেড লাইসেন্সে এ খাতকে এখনো স্বীকৃতিই দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম উৎসে কর কেটে রাখলে কিছু জটিলতা দেখা দেবে। দেখা গেল, একটি পণ্য বা সেবা গ্রাহককে পৌঁছে দেওয়ার পর সরবরাহকারীর কাছ থেকে কর কেটে চালান ইস্যু করা হলো। কিন্তু কোনো কারণে সেই গ্রাহকের পণ্য ফেরত এলে বা কোনো সেবা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে তখন রিটার্ন বা রিফান্ড করা লাগতে পারে। তখন কিন্তু কেটে রাখা কর নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে। তাই সংশোধিত বাজেটে এ বিষয়গুলো পুনরায় বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২১
এসএইচএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।