ঢাকা: পৃথিবীর নবম দেশ হিসেবে ফাইভ-জি চালু করলো বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ঢাকায় পঞ্চম প্রজন্মের এই মোবাইল নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হলো।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ‘‘ফাইভ-জি’র সঙ্গে নতুন যুগ’’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইভ-জি সেবা উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, ফোর-জি সেবার তুলনায় ফাইভ-জি’র গতি প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং ল্যাটেন্সি ১০ ভাগের ১ ভাগে কমে আসবে।
ফাইভ-জি সেবা প্রদানে টেলিটক বিটিআরসি থেকে ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে বলে বিটিআরসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ফাইভ-জি সাপোর্টেড স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফাইভ-জি সেবা ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের সিম পরিবর্তন করতে হবে না।
অনুষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে একটি ফাইভ-জি সাইট উন্মোচন করা হয়, যার মাধ্যমে অতিথিরা এআর/ভিআর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নেন। ফাইভ-জি প্রযুক্তির উদ্ভাবনী ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ৯৬৯ এমবিপিএস গতি ও ৪-১০ এমএস ল্যাটেন্সি উপভোগ করেন।
শীর্ষস্থানীয় আইসিটি অবকাঠামো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কারিগরি সহায়তায় টেলিটক বাংলাদেশে ফাইভ-জি সেবা চালু করেছে।
প্রাথমিকভাবে ছয়টি সাইটে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। সাইটগুলো যে এলাকায়, তা হলো: বাংলাদেশ সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল। এলাকাগুলোর সিংহভাগেই হুয়াওয়ের অবকাঠামোগত সেবা ব্যবহার করা হবে।
টেলিটক এবং হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহকরাই ফাইভ-জি সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। পরবর্তীতে, জেলা পর্যায়ে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা হবে। আগামী বছরের মধ্যে টেলিটকের ২শ’ ফাইভ-জি সাইট নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন। হুয়াওয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালিভাবে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অনুপ্রেরণামূলক বার্তা দেন।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, বাংলাদেশ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস ফাইভ-জি ব্যক্তিক্ষেত্রে, মানুষের বাড়িতে ও বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত পরিসরের ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
ফাইভ-জি কী এবং কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় বিশ্বে নতুন সভ্যতার রূপান্তরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবোটিক্স, বিগডাটা, ব্লকচেইন, আইওটি, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি ও অন্যান্য প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপরিহার্য এক প্রযুক্তির নাম।
এই প্রযুক্তি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও শেখ হাসিনার উন্নত, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা সোসাইটি ৫ দশমিক ০-এর জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন মোস্তাফা জব্বার।
ফাইভ-জি প্রযুক্তি সেবা কেবল গ্রাহকদের জন্য মোবাইল ব্রডব্যান্ড ও ভয়েস কলের প্রযুক্তি নয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবোটিক্স, বিগডাটা, ব্লকচেইন, আইওটি প্রযুক্তির আইওটি, হিউম্যান টু মেশিন, মেশিন টু মেশিন, ইত্যাদি প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ক্রিটিক্যাল মিশন সার্ভিস, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট হোম, স্মার্ট ফ্যাক্টরি সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল গ্রাহকরা অধিকতর উন্নত গুণগত মানের ভয়েস কল ও ফোর-জি থেকে বহুগুণ দ্রুত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগীর রোবট সার্জারি করা যাবে। ড্রাইভার বিহীন গাড়ি চালানো যাবে, স্মার্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের মাধ্যমে অটোনোমাস উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
এমআইএইচ/জেআইএম