ঢাকা: দেশে ডিজিটাল অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি থানায় একটি করে সাইবার ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর রমনায় বিটিআরসি ভবনে ‘সাইবার সুরক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, একসময়ে ফিজিক্যাল অপরাধের জন্য যে ব্যবস্থা নিতে হতো এখন ডিজিটাল ব্যবস্থার জন্য তার চেয়ে বেশি ব্যবস্থা নিতে হবে। কেবল মাত্র ডিএমপিতে একটি সাইবার ইউনিট দিয়ে পুরো দেশের ডিজিটাল অপরাধ মোকাবিলা করতে পারবেন না। আর ডিজিটাল অপরাধ শুধু ঢাকাভিত্তিক নয়। ডিজিটাল অপরাধ এখন ১৫ কোটি পৌঁছে গেছে, সেই পর্যায়ে যেতে হবে। বিশেষ করে থানা পর্যায় পযর্ন্ত। যদি এগুলো এন্টারটেইন করার মতো ব্যবস্থা না থাকে তাহলে অন্তত তথ্য নেওয়া।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক সময় ফোন নম্বর ট্র্যাক করে ফোনের মালিক কোন বাড়িতে, কোথায় আছে জানা হতো। এটি এক সময় হয়তো ঢাকাকেন্দ্রিক কিছু পুলিশ অফিসার ব্যবহার করতো। এখন কিন্তু ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। অপরাধী ধরার জন্য এটি একটি ভালো টুল।
‘আমি মনে করি, আমাদের পুলিশ এবং বিচার বিভাগ উভয়ের জন্য এটি (সাইবার ক্রাইম ইউনিট) দরকার। কারণ, সারাদেশে ডিজিটাল অপরাধ হবে আর কেবল বিভাগে ট্রাইব্যুনাল করে তার বিচার করবো, এটি যথাযথ না। প্রত্যেক থানায় আমি মনে করি সাইবার ক্রাইম ইউনিট করুক বা ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিট করুক। একটা ইউনিট থাকতে হবে। ওখানে দুজন করে অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে রাখা দরকার। ’বলেন তিনি।
ডিজিটাল অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আজকে যে সব অপরাধ নিয়ে চিন্তা করতে হয় ২০ বছর আগে সেগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। এখন এই অপরাধের পরিধি যুদ্ধ-বিগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার মানে যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হয়ে গেছে ডিজিটালি অপরাধ করা। এক দেশ অস্ত্র দিয়ে যেমন হামলা করে তেমনি করে ডিজিটাল অস্ত্র দিয়ে হামলা করে তাকে বিপর্স্ত করার চেষ্টা করে। আমরা যতো ডিজিটাল হবো ডিজিটাল অপরাধের মাত্র ততো বাড়বে। ততো ডিজিটাল অপরাধ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। ডিজিটাল অপরাধ সম্পর্কে জানে না বলে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়ে যায়। ডিজিটাল অপরাধ রোধ করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি লাগবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট অনটেন্ট অপসারণে নির্ভরতা কাটাতে চেষ্টা চলছে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা একশ’ অনুরোধ করলে একটিও এন্টারটেইন করতো না। এখন ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ পর্যন্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি বলবো, আমাদের একটি প্রযুক্তিগত অক্ষমতা আছে। অক্ষমতা হচ্ছে- আমাকে এখন পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া অর্গানাইজেশন যেগুলো আছে তাদের হাতে-পায়ে ধরে কোনো লিঙ্ক অপসারণ করতে হয়। আমি যদি নিজেই লিঙ্ক অপসারণ করতে পারতাম তাহলে হাতে-পায়ে ধরার ব্যাপারপটা চলে যেত এবং শতভাগ লিঙ্ক অপসারণের জায়গা নিশ্চিত করতে পারতাম। আমরা চেষ্টা করছি দুনিয়াতে কোথায় এই প্রযুক্তি আছে।
‘আমি আশা করছি ভবিষ্যতে প্রযুক্তি সংগ্রহ করতে পারব। আমরা দুনিয়া চষে বেড়াইতেছি। যদি কোথাও থেকে প্রযুক্তি গ্রহণ করার সুযোগ থাকে, সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করে নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারি। নিজেরা সোশ্যাল মিডিয়ার যেসব লিঙ্ক আছে সেগুলো অপসারণ করতে পারবো। ’মন্তব্য করেন তিনি।
ডিজিটালাইজেশন যে পরিমাণে বাড়ছে সচেতনতাও প্রচুর বাড়ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যাতে পুরো মাস সচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারি সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম বরকতউল্লাহ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূইয়া, ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম, সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ বক্তব্য রাখেন।
সাইবার নিরাপত্তা ও বিটিআরসির কার্যক্রম বিষয়ে বক্তব্য রাখেন কমিশনের সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
এমআইএইচ/এসএ