শিশুটির দৃষ্টিতে আমি আটকে গিয়েছিলাম। জানি না কেন।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর আফরিনের একটি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকদের একজন তিনি।
সোমবারের ভূমিকম্পের ৩০ ঘণ্টা পর ভেঙে যাওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার পাওয়া সাত বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদের কথা বলছিলেন মাসরি।
উদ্ধারকারীরা তার বাবার মরদেহের পাশ থেকে তাকে উদ্ধার করেন। একইসঙ্গে চাপা পড়ে নিহত হন শিশুটির মা। ভাইবোনেরাও বেঁচে নেই।
চিকিৎসক মাসরি বিবিসিকে বলেন, শিশুটি যেভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, মনে হচ্ছিল সে আমাদের বিশ্বাস করছে। সে বুঝতে পেরেছিল যে, আমাদের হাতে সে নিরাপদ।
তিনি বলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তার মনোবল বেশ। সে ব্যথা সহ্য করছিল। কী এমন ছিল যে, সাত বছর বয়সী এই শিশুকে দৃঢ় ও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল?
চিকিৎসক মাসরি আল-শিফা হাসপাতালের আবাসিক সার্জন হিসেবে কর্মরত। সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটি নামক একটি দাতব্য সংস্থা হাসপাতালটি পরিচালনা করে। এই চিকিৎসক জানান, ভূমিকম্পের পরপরই তিনি অন্তত ২০০ রোগী পেয়েছিলেন।
মাসরি ভূমিকম্পে আহত কয়েকশ লোকের চিকিৎসা করেছেন। এর মধ্যে ১৮ মাস বয়সী একটি শিশুও ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি নিশ্চিত হন যে, শিশুটি সুস্থ। পরে বুঝতে পারেন, বাবা-মা কেউ তার সঙ্গে ছিল না।
তিনি বলেন, হঠাৎ আমি দেখলাম শিশুটির বাবা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন এবং অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, শিশুটিই একমাত্র বেঁচে রয়েছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের মরদেহ বারান্দায় রাখা হয়েছে।
হাসপাতালে একসঙ্গে এত রোগী আসেন যে, চিকিৎসাকর্মীরা স্তব্ধ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক মাসরি বলেন, আমি ভাবতে পারিনি যে, একটি ভূমিকম্প এত ক্ষতি করবে। এত মানুষ হতাহত হবেন।
শিশু মোহাম্মদকে পরদিন চিকিৎসক মাসরি জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে তাকে চিনতে পারছে কি না। উত্তরে মোহাম্মদ বলে, হ্যাঁ, তুমিই সেই চিকিৎসক, যে আমার জীবন রক্ষা করেছো।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
আরএইচ