ওড়িশার বালেশ্বেরে তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬১ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি।
খবরে বলা হয়, ২০ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এ দুর্ঘটনায় হতাহত এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০০। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যে বগিগুলো এখনও ঘটনাস্থলে পড়ে আছে সেগুলোর নিতে আহত-নিহত অনেকেই থাকতে পারেন। স্থানীয় উদ্ধারকারী সংস্থা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেনাবাহিনীরও উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে যেসব সেনা ঘাঁটি রয়েছে সেখান থেকে জওয়ানদের সহায়তা কাজে যেতে বলা হয়েছে। তারা সেখানে উদ্ধার অভিযান, আহতদের চিকিৎসা দেবে। ইস্টার্ন কমান্ড থেকে সেনা মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দল, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিও মোতায়েন করা হয়েছে।
জি নিউজ বাংলা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে ও পরবর্তী কার্যক্রমের নির্দেশনা দিতে বালেশ্বেরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পর এখন পর্যন্ত দুটি রেল জোন মিলিয়ে ৪৮টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এ রুটে। ৩৯ ট্রেনের গতি পথ পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও বালেশ্বেরে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আকাশপথে শনিবার বেলা ১১ টা ৩৯ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তিনি। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কথাও বলেছেন তিনি। তার ঘোষণা অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যারা আছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লাখ রুপি; গুরুতর আহতদের ১ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
এ ছাড়া তিনি আরও বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের যারা আহত হয়েছেন, প্রয়োজনে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাদের চিকিৎসা করানো হবে।
দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনে পশ্চিমবঙ্গের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। তারা মালদা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলার বাসিন্দা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবার প্রতি ২ লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার করে অর্থ দেওয়ার ঘোষণা দেন মোদি। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক হতাহতদের জন্য শনিবার রাজ্যে এক দিন শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রেনগুলোর একটি শালিমার থেকে চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস, অপরটি বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং অন্যটি মালবাহী ছিল।
কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি স্পষ্ট নয় এখনও। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়, কয়েকটি বগি বিপরীত লাইনে আড়াআড়িভাবে পড়ে যায়। এ সময় হাওড়া থেকে আসা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছায়। পরে সেটির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। একই সিগনালে থাকা একটি মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে এ ট্রেনটির ভূমিকা কি ছিল সেটিও নিশ্চিত নয়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতের সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৮১ সালে। যদিও সেটি ছিল প্রাকৃতিক কারণে। সেবার ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়ে বিহারের একটি যাত্রীবাহী ট্রেন নদীতে পড়ে যায়। নিহত হয় ৮০০ প্রাণ। তা ছাড়া ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে যত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে শুক্রবারের ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী বলে মনে করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৩
এমজে