ইউরোপের চরম দক্ষিণপন্থী নেতারা অভিবাসন, পরিবেশসহ একাধিক বিষয়ে ঐক্যের ডাক দিলেন। আসন্ন ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় স্থান দখল করে এমন পরিবর্তন আনতে চান তারা।
মহামারি, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, শরণার্থীর ঢলের মতো একের পর এক সংকট ইউরোপের মানুষের মনে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলছে। ব্যালট বাক্সে সেই পরিস্থিতির ফায়দা তুলছে চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলো।
একের পর এক দেশে নির্বাচনে সাফল্য এবং জনমত সমীক্ষায় ভালো ফল করে দলগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছে।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের সাধারণ নির্বাচনে জয় এবং জার্মানিতে জনসমর্থনের বিচারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসায় এ শিবির আরও চাঙা বোধ করছে।
রোববার ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে মিলিত হয়ে চরম দক্ষিণপন্থী নেতারা ইউরোপের ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরেন। আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিজেদের আসনসংখ্যা আরও বাড়িয়ে রণকৌশল স্থির করলেন তারা।
ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী মাটেও সালভিনি বলেন, ইইউ পার্লামেন্টে কমপক্ষে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শিবির হয়ে ওঠাই চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলোর লক্ষ্য। বর্তমানে ‘আইডেন্টিটি অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ বা আইডি নামের এ রাজনৈতিক শিবির ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনে জয়ী চরম দক্ষিণপন্থী দলের প্রধান খেয়ার্ট ভিল্ডার্স ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তার মতে, নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপে ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প' জাতীয় নির্বাচনেও সমমনস্ক দলগুলির জয়ের ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে।
ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশ আরও কঠিন করে তোলাই চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ব়্যালি পার্টির নেতা জর্দ্যাঁ বারেলা বলেন, ইউরোপ আফ্রিকার ‘ফাইভ স্টার হোটেল’ হয়ে উঠতে পারে না।
তার মতে, বিশাল আকারে অভিবাসন হিংসা ও অপরাধের জন্য দায়ী। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রাও অনেকটা দুর্বল করতে চায় এ শিবির৷
তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত নতুন গাড়ি বাজারে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে। জার্মানির এএফডি দলের নেতা টিনো ক্রুপালা ‘গাড়ির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বন্ধ করার ডাক দেন।
সম্প্রতি নির্বাচনী সাফল্য দেখা গেলেও ইউরোপের চরম দক্ষিণপন্থী দলের মধ্যে এখনো ঐক্যের অভাব রয়েছে। সম্মেলনে ইউরোপের তিন প্রধান নেতার অনুপস্থিতিও নজর কেড়েছে। ফ্রান্সের মারিন ল্য পেন, নেদারল্যান্ডসের খেয়ার্ট ভিল্ডার্স ও জার্মানির আলিস ভাইডেলকে সেখানে দেখা যায়নি৷
খোদ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি দল সালভিনির চরম দক্ষিণপন্থি জোটে যোগ দেয়নি। বিভিন্ন মৌলিক বিষয়েও মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যেমন নেদারল্যান্ডসের নেতা ভিল্ডার্স মাত্রাতিরিক্ত সরকারি ব্যয়ের বিরোধিতা করলেও ইতালির সালভিনি ইউরো এলাকার বাজেটের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম তুলে দেওয়ার পক্ষে।
রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-হামাস সংকটের মতো পররাষ্ট্রনীতির বিষয় সম্পর্কেও দলগুলোর একক অবস্থান দেখা যাচ্ছে না।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও চরম দক্ষিণপন্থিদের বিভাজন স্পষ্ট। সালভিনির প্রতিদ্বন্দ্বী মেলোনির দল আইডি সংসদীয় শিবিরের অংশ নয়। দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল ও সংস্কারপন্থী বা ইকেআর শিবিরে মেলোনির দল ছাড়াও স্পেনের চরম দক্ষিণপন্থি ভক্স এবং পোল্যান্ডের পিস পার্টিও রয়েছে।
ফলে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থি দলগুলি সার্বিক সাফল্য পেলেও দুই রাজনৈতিক শিবিরে বিভাজন তাদের ঐক্যের পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে দুই শিবিরের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
আরএইচ