জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে নতুন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে চীন ও ভারতই নাকি ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের ‘প্রধান অর্থদাতা’।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, চীন ও ভারত রাশিয়ার তেল কিনে চলেছে। তারা যুদ্ধের মূল অর্থ জোগাচ্ছে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা দেশগুলোর ওপর ‘দ্বিতীয়িক নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের পক্ষে মত দিয়ে আসছেন। তিনি যুক্তি দেন, এতে রাশিয়ার ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। কিন্তু এই মার্কিন নীতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে আগেই চীন ও ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছিল, ওয়াশিংটনের চাপের কাছে তারা নত হবে না।
মঙ্গলবারের ভাষণে ট্রাম্প ন্যাটো সদস্য দেশগুলোকেও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, যারা রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনছে অথচ একইসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তারা কার্যত নিজেদেরই বিপক্ষে যুদ্ধের অর্থ জোগাচ্ছে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, ভারত ও চীনের পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে। তবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইউরোপ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে।
গত আগস্টের শেষ দিকে ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এতে অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যে মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, নয়াদিল্লি রুশ তেল আমদানি কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ বছরের শুরুর দিকে শুরু হওয়া মার্কিন-চীন শুল্কযুদ্ধ সাময়িক বিরতিতে থাকায় বেইজিংয়ের ওপর নতুন কোনো শুল্ক এখনো আরোপ করা হয়নি।
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতেই স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারত নিঃসন্দেহে রুশ তেল কিনতে থাকবে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি ৫.৬ শতাংশ বেড়ে দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছে।
চীনও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও জ্বালানি সহযোগিতা করা চীনের বৈধ অধিকার।
সম্প্রতি বেইজিং সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, চীন ও ভারতের প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা আসলে তাদের অর্থনৈতিক উত্থান ঠেকানোর ‘ঔপনিবেশিক সুর’ ছাড়া কিছু নয়।
এমজে