ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে নেপোলিয়ন থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানালেন রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি বলেছেন, পশ্চিমা নেতাদের উচিত রুশ জনগণকে হালকাভাবে না নেওয়া এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে নিহত রুশ সেনাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পুতিন এই মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, তার দেশ ইউক্রেন নিয়ে এমন এক শান্তি চুক্তির সন্ধান করছে, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তারা ইতোমধ্যে যেসব অর্জন করেছে, তা থেকে পিছু হটবে না।
যুদ্ধের কারণে স্বামী, সন্তান বা ভাই হারানো রুশ নারীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, আমাদের এমন একটি শান্তি চুক্তি বেছে নিতে হবে, যা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
একজন নিহত সৈন্যের মা পুতিনকে জিজ্ঞেস করেন, রাশিয়া কি পিছু হটবে? উত্তরে পুতিন সোজাসাপ্টা জানান, তার এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। সাক্ষাৎকালে কিছু নারী আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের জল মুছতে দেখা যায়।
বর্তমানে, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ— আনুমানিক ১,১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার— ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা নীতিকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন। তিনি মস্কোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছেন এবং গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর কিয়েভের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছেন।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে পুতিন শান্তি আলোচনার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন, তবে তিনি রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি নন। তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা পরিত্যাগ করতে হবে।
গত গ্রীষ্মে যুদ্ধ শেষ করার শর্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই তাদের সেনাবাহিনী পুরোপুরি সরিয়ে নিতে হবে সেই চারটি অঞ্চল থেকে, যেগুলো রাশিয়া দাবি করেছে এবং আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
ট্রাম্পের হঠাৎ এই নীতিগত পরিবর্তন একদিকে যেমন শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, তেমনই এটি ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই সপ্তাহে, ইউরোপীয় নেতারা আবারও কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, রাশিয়া ইউরোপের জন্য এক বড় হুমকি।
তিনি আরও বলেন, ফ্রান্স তার মিত্রদের জন্য পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে এবং ইউক্রেনে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির পর সেখানে শান্তিরক্ষীবাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনায় আগ্রহী ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক প্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
রাশিয়া ম্যাক্রোঁর এই মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি। তারা ব্যঙ্গ করে তাকে ‘মাইক্রন’ বলে অভিহিত করেছে। রুশ ব্যঙ্গচিত্রে তাকে নেপোলিয়নের মতো দেখানো হয়েছে— একজন নেতা, যিনি ১৮১২ সালে রাশিয়ায় পরাজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
ম্যাক্রোঁর এইসব তৎপরতা বিষয়ে পুতিন তার নাম উল্লেখ না করে মন্তব্য করেন— এখনো এমন কিছু লোক আছে, যারা নেপোলিয়নের সময়ে ফিরে যেতে চায়। তারা ভুলে গেছে, সেই অভিযান কীভাবে শেষ হয়েছিল। আমাদের শত্রু ও বিরোধীদের সব ভুল এখান থেকেই শুরু হয়েছে— তারা রুশ জনগণের আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও শক্তিকে অবমূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৫
এমএম