যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় রাজি থাকার আভাস দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে জোটটি প্রয়োজনমতো প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) ইইউ জোটের বাণিজ্যমন্ত্রীরা লুক্সেমবার্গে বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে তারা অধিকাংশই একমত হন, সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে আলোচনা শুরু করাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বৈঠকের পর, ইইউ বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ সাংবাদিকদের বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে ব্লকের পাল্টা ব্যবস্থাগুলো ঠিক করা হবে।
মারোস বলেন, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও উপজাতের ক্ষেত্রে তারা ২৮ বিলিয়ন ডলার সম্পর্কে কথা বলছেন। তিনি জানান, সোমবার রাতে তালিকাটি চূড়ান্ত করার কথা। তালিকাটি ২৬ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত হবে না। ইইউ তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনেছে বলেও মারোস জানান।
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি আর্সুলা ভন ডের লেইন আগে বলেছিলেন, ইইউ শিল্প পণ্যের উপর ‘জিরো-ফর-জিরো’ আমদানি শুল্ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে, জোটটি নিশ্চিত করেছে, তারা আগামী সপ্তাহ থেকে বাছাইকৃত মার্কিন আমদানির উপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ শুরু করবে।
সেফকোভিচ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজ হোক বা কাল, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসব এবং পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি সমঝোতা খুঁজে বের করব।
মার্কিন পণ্যের ওপর ইইউ শুল্কের প্রথম দফা ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে, এবং দ্বিতীয় দফা ১৫ মে নির্ধারণ করা হবে। এটি ইউরোপীয় ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর মার্কিন শুল্কের সরাসরি প্রতিক্রিয়া।
যদিও ইইউর অগ্রাধিকার আলোচনার বিষয়, তবে সেফকোভিচ সতর্ক করে বলেন, প্রয়োজনমতো ব্লক তার প্রতিক্রিয়া আরও বাড়াতে প্রস্তুত। এর মধ্যে থাকতে পারে বলপ্রয়োগ বিরোধী পদ্ধতি (এসিএআই) ব্যবহার করা, ইইউকে মার্কিন কোম্পানিগুলোর পাবলিক চুক্তিতে প্রবেশাধিকার সীমিত করার সুযোগ দেওয়া বা মার্কিন পরিষেবাগুলোকে টার্গেট করার অনুমতি দেওয়া।
কিন্তু কিছু ইইউ দেশ, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের সূত্রে সম্পর্কিত, তারা সতর্কতার আহ্বান জানিয়েছেন। আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলপ্রয়োগ বিরোধী পদ্ধতিকে পারমাণবিক বিকল্প হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বেশিরভাগ ইইউ দেশ অন্তত এর কাছাকাছি যেতে প্রস্তুত নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী নীতির কারণে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ মার্কিন শুল্কের সম্মুখীন হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্রায় সকল পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপও হয়েছে।
পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের যুদ্ধে, ব্রাসেলসের কাছে ওয়াশিংটনের তুলনায় কৌশলগতভাবে সুযোগ কম রয়েছে। কারণ, ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইইউ’র পণ্য আমদানি মোট ৩৬৬.২ বিলিয়ন ডলার ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রে ইইউ’র রপ্তানি ছিল ৫৮২.১ বিলিয়ন ডলার।
ডাচ বাণিজ্যমন্ত্রী রিনেট ক্লেভার সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বাজারকে আরও বিঘ্নিত করতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন। তিনি বলেন, আমাদের শান্ত থাকতে হবে এবং এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, যেন উত্তেজনা হ্রাস পায়। শেয়ারবাজার এখনই দেখাচ্ছে, আমরা যদি সরাসরি উত্তেজনা বৃদ্ধি করি তাহলে কী হবে। তবে মার্কিনিদের আলোচনার টেবিলে আনার জন্য প্রয়োজনমতো আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকব।
ইইউর সংযত পদ্ধতি সত্ত্বেও, জোটটির পরিকল্পিত শুল্ক বিতর্কিত রয়ে গেছে। ট্রাম্প এর মধ্যেই হুমকি দিয়েছেন, ইইউ যদি মার্কিন বোর্বনের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে অনড় থাকে, তাহলে ইইউ’র অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের ওপর ২০০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে। এমন পদক্ষেপ ওয়াইন ও স্পিরিটের প্রধান রপ্তানিকারক ফ্রান্স আর ইতালিতে উদ্বেগ জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৫
এমএইচডি/এমজে