গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনি বাধ্যবাধকতা রক্ষায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে ভোটদান থেকে ভারতের বিরত থাকার সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র।
শনিবার (১৪ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং হতাশাজনক যে, ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আইনি ও মানবিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার বিষয়ে জাতিসংঘে গৃহীত এক প্রস্তাবে আমাদের সরকার ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ পর্যন্ত ষাট হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু, ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন। গোটা একটি জনগোষ্ঠীকে অবরুদ্ধ করে, খাদ্য ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এমন এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ভারত সরকার নিরপেক্ষতার নামে কোনোরকম অবস্থান নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এটা শুধু রাজনৈতিক নির্লিপ্ততা নয়, বরং আমাদের উপনিবেশবাদবিরোধী ঐতিহ্যের এক করুণ বিপরীত যাত্রা। এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েল একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অভিযানে নেমেছে, তখন আমরা শুধু নীরবই নই, বরং যখন তার সরকার ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে সে দেশের নেতৃত্বকে হত্যা করছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে, তখনও আমরা প্রশ্নহীনভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছি।
প্রশ্ন উঠছে— আমরা কি একটি জাতি হিসেবে আমাদের সংবিধানের নীতি এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধকে বিসর্জন দিচ্ছি? সেই সংগ্রাম তো ছিল শান্তি, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে। যেই নীতিগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে ভারত বিশ্বমঞ্চে একসময় ন্যায়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল— আজ সেই পথ থেকে সরে দাঁড়ানো কি আমাদের জন্য সম্মানজনক?
এর কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না।
সত্যিকারের বিশ্ব নেতৃত্ব মানে শুধু কূটনৈতিক হিসেব-নিকেশ নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষ নেওয়ার সাহস। অতীতে ভারত এই সাহস দেখিয়েছে। বারবার।
আজকের বিশ্ব ক্রমেই বিভক্তির দিকে এগোচ্ছে। এই সময়েই প্রয়োজন মানবতার পক্ষে ভারতের কণ্ঠস্বর পুনরুদ্ধার করা— সত্য ও অহিংসার পক্ষে নির্ভীক অবস্থান নেওয়া। তবেই ভারত তার নৈতিক নেতৃত্বের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবে। ’