ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

উড়ালসেতু ভেঙে পড়বে, সাবধান করেছিলেন রেলওয়ের প্রকৌশলী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৬
উড়ালসেতু ভেঙে পড়বে, সাবধান করেছিলেন রেলওয়ের প্রকৌশলী

ঢাকা: কলকাতায় নির্মাণাধীন বিবেকানন্দ উড়ালসেতুটি যে ভেঙে পড়বে, তিনমাস আগেই সাবধান করেছিলেন রেলওয়ের এক প্রকৌশলী। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তরে কর্মরত তার বন্ধু অপর এক প্রকৌশলীকে ফোন করে এ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন তিনি।

 

স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, নির্মাণাধীন সেতুটির নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন স্টিল গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে অভিজ্ঞ রেলওয়ের ওই প্রকৌশলী। কৌতুহলবশত এর পিলারগুলোর দিকে নজর গিয়েছিল তার। সঙ্গে সঙ্গে আঁৎকে উঠে ফোন করেন বন্ধুকে। সরাসরি বলে দেন, এ সেতু ভেঙে পড়তে চলেছে।

ফরেন্সিক বিভাগের কর্মকর্তা চিত্রাঙ্ক সরকারের মতে, ৪০ নম্বর পিলারটা থেকেই গোলমালের শুরু।

এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তার মতে, সেতুর অন্য অংশে দুই স্তম্ভের মধ্যে দূরত্ব কম। কিন্তু ৪০ আর ৪১ নম্বরের মধ্যে দূরত্বটা বেশি। কিন্তু তার জন্য ৪০ নম্বর স্তম্ভটি যত শক্ত হওয়ার কথা ছিল, তা সেভাবে করা হয়নি। তাই ঢালাইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই স্তম্ভের উপরে থাকা বিমটি সরে গেছে। আর তাতেই ভারসাম্য হারিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে স্তম্ভের উপরে থাকা উড়ালপুলের পুরো অংশটি।

এদিকে, উড়ালসেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় এবার তৃণমূলের নাম উঠে আসতে শুরু করেছে। যে অংশটি ভেঙে পড়েছে, তার সাব-কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজ। এর কর্ণধার রজত বক্সী স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর ভাতিজা। আর সঞ্জয়ের স্ত্রী স্মিতা বক্সী একই এলাকার বিধায়ক।

কলকাতার গিরিশ পার্ক এলাকায় সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যখন বিবেকানন্দ উড়ালসেতুটি ভেঙে পড়ে, তখনও এ কার্যালয় খোল ছিল। দুর্ঘটনার খবর বাতাসে ভাসতেই বন্ধ হয়ে যায় এখানকার শাটার।

স্থানীয়দের দাবি, রজতের নামে আসলে ব্যবসাটা পরিচালনা করেন সঞ্জয় দম্পতী। শুধু সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজ নয়, এরকম অন্তত দশটি সংস্থার নামে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন তারা। পাশাপাশি বেআইনি নির্মাণ, বেশি দামে দেশি মদ বিক্রি, বাংলাদেশি নারীদের নিয়ে ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন এই বক্সী পরিবার।

তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার দাবি, পুরসভা ও সরকারকে হাতে রেখে কারা ওই এলাকায় উড়ালসেতুর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, স্থানীয় মানুষের অনেকেই তা জানেন।

এদিকে, ভেঙে পড়া উড়ালসেতুতে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নাট-বল্টুতে সমস্যা ধরা পড়ার পরও কাজ থামায়নি নির্মাণ সংস্থা আইভিআরসিএল। ত্রুটিপূর্ণ এসব নাট-বল্টুর ওপর ঢালাই দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সংস্থাটির কর্তব্যক্তিরা। পুলিশ তাই প্রথমে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা পরিবর্তন করে। হত্যা, হত্যার চেষ্টা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর আইভিআরসিএল’র কলকাতা অফিস সিলগালা করা সহ অভিযান পরিচালিত হয়েছে অন্যান্য শহরের অফিসেও। সেই সঙ্গে আটক ১০ কর্মকর্তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পরে এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে বাকি সাতজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৬
আরএইচ

**
কলকাতায় চলছে উদ্ধার কাজ, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।