ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ধ্বংসাত্মক সুনামি আসছে, প্রস্তুত কি যুক্তরাষ্ট্র?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
ধ্বংসাত্মক সুনামি আসছে, প্রস্তুত কি যুক্তরাষ্ট্র?

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে ঘটতে যাচ্ছে শক্তিশালী ভুমিকম্প। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে ভয়াবহ সুনামি ।

১৭০০ সালে ঘটে যাওয়া ৯.২ মাত্রার ভূমিকম্প গোটা পৃথিবীকেই করেছিলো ক্ষতিগ্রস্ত, এবারের ভূমিকম্প থেকে তেমনই ভয়াবহতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০০৪ সালের সুমাত্রা উপকূলে আর ২০১১ সালের টোকহুতে আঘাত হানা সুনামির চেয়েও হতে পারে তা ভয়াবহ কিছু।

ভূ-তাত্ত্বিকদের আশঙ্কা, প্রশান্ত মহাসাগরের ক্যাসক্যাডিয়া সাবডাকশন জোনের ৬০০ মাইল জুড়ে এই ভূমিকম্প হতে পারে যা মারাত্মক এক সুনামি সৃষ্টি করবে। এবারের যে সুনামির আশঙ্কা করা হচ্ছে তার বিস্তৃতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপান পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে বলেও আশঙ্কা করছে প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার।

গত ২০ থেকে ২২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায় সিসমোলোজিক্যাল সোসাইটি অব অামেরিকা (এসএসএ)’র বার্ষিক সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে এই সুনামির আঘাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, ভূতত্ত্ববিদরা সুনামির শঙ্কার মাত্রা নির্ধারণে এই অঞ্চলে পুরনো ঘটনাগুলোরও তত্ত্ব-তালাশ করে দেখছেন।

গত ২০০০ বছরে ইস্টার্ন এলিউশিয়ান আয়ল্যান্ডে বেশ কয়েকটা বড় ভূমিকম্প ও সুনামির নজির রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ভূমিকম্প হলে গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই ও ক্যালিফোর্নিয়া বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

তবে অতীতের সুনামিগুলো নিয়ে, বিশেষ করে প্রাক ঐতিহাসিক সময়ের ঘটনাগুলো সম্পর্কে খুব কম তথ্যই বিজ্ঞানীদের কাছে রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের ভূতত্ত্ববিদ রিক উইলসন বললেন, অতীতের সুনামিগুলো কোথায় কোথায় হয়েছিলো, তা বের করা গেলে আমরা নিশ্চিত হতে পারবো ফের কোন সময় এই অঞ্চলে সুনামি আসতে পারে। আর তার ভিত্তিতেই এর মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আন্দাজ করা যাবে।   উইলসন জানালেন, ১৮৫০ সালের একটি সুনামিতে গোটা বিশ্বে ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিলো।

গবেষকরা বলছেন এই অঞ্চলে প্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ বছরে একটি করে বড় ভূমিকম্প ও তার জের ধরে সুনামি আসে। সেই হিসেবে একই ধরনের একটি ভূমিকম্প আসার সময় এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে। এমনটা ঘটলে হাজার হাজার মানুষ হয় মারা পড়বে, নয়তো বাস্তুচ্যুত হবে। ওরেগন ও ওয়াশিংটন রাজ্যের ১০০০ এর বেশি ব্রিজ হয় ভেঙ্গে যাবে নয়তো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।

এছাড়াও উপকূলীয় প্রধান হাইওয়ে ইউএস রুট ১০১ ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়বে। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। সিয়াটল পোর্টল্যান্ড ও অন্যান্য শহর এলাকায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ভবন বড় ধরনের ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখে নেওয়া কোড মেনে করা হয়নি সেগুলোই ক্ষতির মুখে পড়বে।

২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় আর ২০১১ সালে জাপানের টোহোকুতে যে ভয়াবহ সুনামি হয়ে গেলো তারপরেই মূলত সুনামি বিজ্ঞান, সতর্কতা, প্রস্তুতি এসব নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এবার মহাসমুদ্রে সুনামির বার্তা পেতে ক্যামেরাবাহী ড্রোন পাঠানোর কথা ভাবছেন। যাতে ড্রোন থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তা থেকে সুনামির পরিস্থিতি-মাত্রা-গতিপ্রকৃতি আগেভাগেই জেনে নেওয়া যাবে।

বিজ্ঞানীরা আরও দেখছেন, সুনামি যে কেবল ভূমিকম্পের কারণেই হয়, তা নয় পৃথিবীর ওপর কোন গ্রহাণুর আঘাত থেকেও হতে পারে। এ নিয়েও এসএসএ’র আলোচনায় কথা হয়েছে।

১৭০০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপান উপকূলে যে ঐতিহাসিক সুনামি আঘাত হেনেছিলো তার সঙ্গে বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাসক্যাডিয়া সাবডাকশন জোনসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সম্ভাব্য এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের যোগসাজশ পেয়েছেন।

ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস গোল্ডফিঙ্গার বলছেন, ক্যাসকেডিয়ায় এমন একটি ভূমিকম্প হতে পারে যা স্যান অাঁদ্রিয়াস চলচ্চিত্রে দেখানো ভূমিকম্পের চেয়েও অন্তত ৩০ গুন শক্তিশালী। ওই চলচ্চিত্রে ভূমিকম্পে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চিত্রই দেখানো হয়েছে।

‘আর সেই ভূমিকম্পের ফলে যে ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে তা স্যান আঁদ্রিয়াসেও দেখানো যায়নি। ’

ক্যাসকেডিয়ার এই ভূমিকম্প ৯.০ মাত্রার হবে আর তার তিন থেকে পাঁচ মিনিট স্থায়ী হতে পারে বলেই ধারনা বিজ্ঞানীদের।
জাপানের ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি তিন মিনিট স্থায়ী ছিলো। যা সত্যিই ছিলো ভয়াবহতার চরম কিছু একটা, বলেন গোল্ডফিঙ্গার। এমনটা যদি হয়েই যায়, আমাদের সেতুগুলো ভেঙ্গে যাবে, হাইওয়ে বন্ধ হয়ে যাবে আর গোটা উপকূলই পরিণত হবে ধ্বংসস্তুপে। পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে সেখানে উদ্ধারকর্মী পৌঁছানোই হবে দুষ্কর।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্র, রাজ্য ও সামরিক বিভাগ এমন কিছু একটা ঘটে গেলে কি করণীয় হবে তার পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেছে।

সর্বোচ্চ ক্ষতি হিসেবে দেখা হচ্ছে অন্তত ১৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি, ৩০ হাজার মানুষ আহত, হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আর গোটা অঞ্চলের অর্থনীতি দশকের না হলেও কয়েক বছরের জন্য ভেঙ্গে পড়বে।

এরই মধ্যে কার্গো প্লেন, হেলিকপ্টার, জাহাজ প্রস্তুত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সতর্ক ও প্রস্তুত করা হচ্ছে কয়েক হাজার সেনা, জরুরি বিভাগের কর্মী, পুলিশ, লাশঘর, অগ্নিনির্বাপন, প্রকৌশল, হাসপাতাল বিভাগের কর্মীদের।  

এবারের সতর্কতা হারিকেন ক্যাটরিনা বা সুপার স্টর্ম স্যান্ডির চেয়েও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটন স্টেট আর্মি ন্যাশনাল গার্ড এর  লে. কর্নেল ক্লেটন ব্রাউন।

সতর্কতা পরিকল্পনা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১৪০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
এমএমকে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।