ঢাকা, রবিবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ঢাকার ১৯ গুণ বড় বরফ খণ্ড ভেঙে পড়লো অ্যান্টার্কটিকায়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪১, জুলাই ১২, ২০১৭
ঢাকার ১৯ গুণ বড় বরফ খণ্ড ভেঙে পড়লো অ্যান্টার্কটিকায়! গত নভেম্বরে লার্সেন সি’র ভাঙনের শুরুর দিকে তোলা ছবি

ভয়াবহ-বিস্ময়কর ধস নেমেছে অ্যান্টার্কটিকায়। বরফ মহাদেশটির পশ্চিমাংশ থেকে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৮শ’ বর্গকিলোমিটারের এক লাখ কোটি টন একটি হিমশৈল। যে হিমশৈলগুলোর পুরুত্বই হয় এক কিলোমিটারের মতো!

ঢাকা মহানগরের আয়তন যত, আকৃতিতে তার চেয়ে ১৯ গুণ বিশাল এই শৈল। কলকাতা নগরীর হিসাবে ৩২ গুণ, আর যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে তাদের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের চেয়েও বিশাল!

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রজেক্ট মাইডাস’র পক্ষ থেকে বুধবার (১২ জুলাই) এ খবর দেওয়া হয়েছে।

তারা বলেছে, গত ১২ মাস ধরে পশ্চিমাঞ্চলের ওই অংশটিতে নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। সোমবার (১০ জুলাই) থেকে শুরু করে বুধবারের মধ্যে হিমশৈলটি ভেঙে পড়ে পার্শ্ববর্তী ওয়েড্ডেল সাগরে।

ভেঙে পড়া বরফখণ্ড বা হিমশৈলটিকে ‘এ-৬৮’ বলা হচ্ছে। এটি অ্যান্টার্কটিকার ‘লার্সেন-সি’ আইস শেল্ফ বা বরফ-তাকের অংশ। এই তাকগুলোরই পুরুত্ব কিলোমিটার ছাড়ানো। দক্ষিণ আমেরিকা ও আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিমাংশে ‘লার্সেন সি’ বরফাঞ্চল।

লার্সেন সি’র বিশালতা উল্লেখ করে প্রজেক্ট মাইডাস বলছে, এটি অ্যান্টার্কটিকার বড় হিমাঞ্চলগুলোর চতুর্থতম।

আর যে অংশটি ভেঙে পড়েছে সেটার মধ্যে পানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি বিশাল হ্রদের অন্যতম ‘লেক এরি’র দ্বিগুণ প্রায়। সর্বোচ্চ ২১০ ফুট গভীরতার লেক এরির আয়তন ২৫ হাজার ৭৪৪ বর্গকিলোমিটার।

জলবায়ুর প্রভাব পরিবর্তনে এই হিমশৈল ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানা না গেলেও গবেষক দলের তথ্য, ১৯৯৫ সালে লার্সেন এ নামে আরেকটি বরফ তাকের ধসে পড়ার পর লার্সেন সিতে নড়াচড়া দেখা যায়। গত ১২ মাসে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন।

লার্সেন সি’র ভেঙে পড়া অংশের আকাশ থেকে তোলা ছবিনাসার বিশেষায়িত উপগ্রহ অ্যাকুয়া মডিসে ধারণকৃত চিত্র অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিশালকায় হিমশৈল গত তিন দিনে ধসেছে।

মাইডাসের প্রধান গবেষক ও যুক্তরাজ্যের সোয়ানসিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আড্রিয়ান লুকম্যান বলেন, আমরা কয়েকমাস ধরে এমন একটি ঘটনা দেখতে পাচ্ছিলাম যেন। অবাক হয়েছি এই বরফখণ্ডের শেষ কয়েক কিলোমিটার আলগা হতে লম্বা সময় নিতে দেখে।

লুকম্যান মনে করেন, এই হিমশৈলটি এখনও পুরোপুরি একত্রেই আছে। অর্থাৎ ভাঙা অংশটিতে ভাঙন ধরেনি। এতোবড় বরফখণ্ডের এভাবে একসঙ্গে ভাঙা সবাইকে অবাক করেছে।

লুকম্যানের নেতৃত্বে গবেষকরা বলছেন, লার্সেন সি’র ১২ শতাংশ এই হিমশৈল ভেঙে পড়ায় এখন অ্যান্টার্কটিকার ওই উপদ্বীপের গড়নকে পরিবর্তিত করছে।

সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির ভূগোলবিজ্ঞানী ও মাইডাসের সদস্য মার্টিন ও’লিয়ারি বলেন, মনুষ্য-সৃষ্ট কারণে হিমশৈলটি ভেঙে পড়েছে কিনা এমন বিষয় এখনও আমাদের চোখে ধরা পড়েনি। তবে বিশ্বের তাবৎ সংস্থাগুলোই এ নিয়ে কাজ করছে।  

ও’লিয়ারি মনে করেন, গবেষকদের মতো পুরো বিশ্বই এতো বড় বরফখণ্ডের ভাঙনে হতবাক। সেই বিস্ময়কর কারণটি খুঁজে বের করতেই এখন তাদের সব আগ্রহ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।