ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দাভোসে ট্রাম্পের জন্য শীতল চোখ রাঙানি!

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
দাভোসে ট্রাম্পের জন্য শীতল চোখ রাঙানি! প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যোগদানের জন্য বৃহস্পতিবার  সুইজারল্যান্ডের স্কি-রিসোর্ট শহর দাভোসে পৌঁছেন। ছবি-সংগৃহীত

‘যাবেন কি যাবেন না’ –এমন জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি পাননি তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টদের মতো তেমন কোনো উষ্ণ, আহামরি সংবর্ধনা। তার অতি সংরক্ষণবাদী ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ পলিসির কারণে ইউরোপীয় মিত্ররাও তাকে নিয়ে সন্দিহান, নাখোস ও আস্থাহীন।

অন্যদিকে তার চরম বর্ণবাদী অবস্থান ও বেঁফাস বক্তব্যের কারণে শুক্রবার কিছু আফ্রিকান দেশ তার ভাষণ বয়কটও করতে পারে।  

বিশ্ব বার্ষিক অর্থনৈতিক ফোরাম উপলক্ষেই ট্রাম্পের দাভোসে আসা।

অর্থনৈতিক এলিটদের এই মহাযজ্ঞে অংশ নেবেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ৩০০০ ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের এক নম্বর সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি দেশের মহাশক্তিধর নেতা হিসেবে শুক্রবার দিনের শেষ দিকটায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
 
কিন্তু তিনি যদি তার বক্তৃতায় সারাবিশ্বের নেতাদের সামনে তার অতি প্রতিক্রিয়াশীল, অতি রক্ষণশীল এবং অতি বিস্ফোরক হামবড়া ভাব নিয়ে ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতিরই পুনরাবৃত্তি ঘটান, তাহলে মিত্রদের বাহবার বদলে বিরোধিতারই মুখোমুখি হবেন। ট্রাম্পের আগমনের আগেই সে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।  

অতীতে আমেরিকার সব মোড়লিপনা টু-শব্দটি না করিই মেনে নেবার যে সংস্কৃতি লালন করে আসছিলেন ইউরোপীয় মিত্ররা, এবার তাতে ছেদ পড়বার ইঙ্গিতই স্পষ্ট।  

ফ্রান্সের তরুণ, স্পষ্টবাদী উদ্যমী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ (Emmanuel Macron) আর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল (Angela Merkel) সেটা ঝেড়ে-কেশেই বলে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে একটা দিক তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউরোপ এখন আর কারো অঙ্গুলি নির্দেশে চলবার পাত্র নয়। নানা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত করবার সময় এসেছে। আমেরিকার জোর করে চাপিয়ে দেয়া বেঢপ জোব্বা বিনা বাক্যে গায়ে চড়াতে রাজি নয় ইউরোপ। সংরক্ষণবাদ, ক্ষেত্রবিশেষে বর্ণবাদী মানসিকতার যে উৎকট ভাব নিয়ে এগোচ্ছে ট্রাম্পের লাগামহীন এক্কা গাড়ি তাতেও চড়ে বসতে আর চায় না ইউরোপ।  

ট্রাম্প প্রশাসনের চরম আগ্রাসী নীতি-আদর্শের কারণে সুইজারল্যান্ডের নয়নাভিরাম স্কি-রিসোর্ট শহর দাভোসের এই সম্মেলনটি ট্রাম্পের প্রতি যে ‘সন্দিহান এবং সম্ভবত বৈরি’—‘skeptical - and possibly hostile’—হয়ে উঠবে তার সব লক্ষণ স্পষ্ট।  

ইউরোপীয়রা ট্রাম্পের প্রতি তাদের ‘তিতা কথা’ মিঠে প্রলেপ দিয়ে পরিবেশন করবে হয়তো! কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলো এতো সহজে ভুলবে না তাদের কালো চামড়ার কারণে ট্রাম্পের করা ব্যঙ্গাত্মক আর চরম বর্ণবাদী উক্তি: ‘ওইসব গুহ্যদ্বার দেশ’---‘দৌজ শিটহোল কান্ট্রিজ’! 

সাংবাদিক নিয়াল ফারগুসন (Niall Ferguson) সেটা খুব সরল ইংরেজিতে বলে দিয়েছেন:  ‘‘Trump should not expect a warm welcome... Even before his arrival, world leaders signaled veiled displeasure with the American president's policies.’’

এখন একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক, ট্রাম্পের আগমনের আগে তাকে পরোক্ষ ইঙ্গিত করে বুধবার দাভোসে দেওয়া বক্তৃতায় কী বলেছেন আঙ্গেলা মেরকেল। বর্তমান বিশ্বে পুতিনের পর রাজনীতির কুশলী দাবাড়ু মেরকেলের ‘আকেল মান্দ কি লিয়ে ইশারা হি কাফি হে’-বার্তাটি এরকম: “ আমরা বিশ্বাস করি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করলে তা আমাদের জন্য কোনো সুফল আনবে না। আমরা বিশ্বাস করি সহযোগিতায়। রক্ষণশীলতা কোনো যুৎসই জবাব নয়। ’’

আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ একই সুরে বলেছেন: “আমরা কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছি, নাকি নিইনি? আমরা যদি আন্তর্জাতিক সহয়োগিতার স্বীকৃত মানদণ্ডের ব্যাপারে একমত না হতে পারি তাহলে মধ্যবিত্তকে, শ্রমজীবী মানুষকে একথা কখনোই বোঝাতে পারবো না যে, বিশ্বায়ন একটি ভালো ব্যাপার। ”
উল্লেখ্য, ট্রাম্পকে দাভোস সম্মেলনে আসতে রাজি করানোর কাজটা ইমানুয়েল মাক্রোঁই করেছেন।  
আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এদিন ট্রাম্পের ‘রক্ষণশীলতা’কে পরোক্ষ সমালোচনা করেছেন। তিনি এক ধাপ এগিয়ে এমন কথাও বলতে ছাড়েননি যে, জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন আর সন্ত্রাসবাদের মতো রক্ষণশীলতাও বিশ্বের জন্য সমান বড় এক চ্যালেঞ্জ।  
আফ্রিকার নেতাদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, আফ্রিকানদের হেয় করে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ট্রাম্পকে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের কেউ কেউ ট্রাম্পের বক্তব্য বয়কটও করতে পারেন—এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টারনেট কোম্পানি Silulo Ulutho Technologies-এর সিইও Luvuyo Rani স্পষ্ট বলে দিয়েছেন: “We’re only looking for that, just to apologize” 
 
আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী নেতা বোনাং মোহালে (Bonang Mohale) ট্রাম্পের ভাষণ বয়কটের ডাক দিয়েছেন।  
সব মিলিয়ে ট্রাম্প হবেন দাভোসে সবচেয়ে অজনপ্রিয় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।  
একটি পত্রিকা তাই রূপকার্থে শিরোনাম করেছে: ‘No red carpet as Trump arrives in Davos to push 'America First' agenda to icy global confab’

এ অবস্থার জন্য আর কেউ নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই দায়ী! 

বাংলাদেশ সময়: ০৪০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।