ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আলোচনায় ‘অতিসাধারণ’ সারেঙ্গির ‘অন্ধকার অতীত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৯
আলোচনায় ‘অতিসাধারণ’ সারেঙ্গির ‘অন্ধকার অতীত’

গত ৩০ মে সন্ধ্যায় রাইসিনা হিলের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি শপথ নেওয়ার পর থেকেই ভারতজুড়ে আলোচনায় তিনি। বিশেষ করে তার ‘অতিসাধারণ’ বেশ-ভূষা ও চালচলন তুলে ধরছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। বলা হচ্ছে, অজপাড়া গাঁয়ের কুঁড়েঘর থেকে এসে মন্ত্রী হয়েছেন সারেঙ্গি। সেজন্য প্রশংসার জোয়ার বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তবে ভারতের সংবাদমাধ্যম সারেঙ্গির এই ‘অতিসাধারণ’ রূপ তুলে ধরলেও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে আসছে তার ‘সাম্প্রদায়িক অতীত’। বিবিসি, হাফিংটন পোস্ট, গাল্ফ নিউজসহ অনেক সংবাদমাধ্যম বলছে, বিজেপির নেতা সারেঙ্গির এই ‘সাধারণ চেহারা’র পেছনে ‘অন্ধকার রূপও’ আছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে উড়িষ্যায় অস্ট্রেলিয়ার খ্রিস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস ও তার দুই শিশুসন্তানকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে যে মৌলবাদী দাঙ্গাবাজরা, তাতে জড়িত ছিল উগ্র সংগঠন বজরং দল। সেসময় ওই দলের উড়িষ্যা রাজ্য প্রধান ছিলেন সারেঙ্গি।

তখন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন বজরং দলকে। যদিও ‘সরকারি তদন্ত’ শেষে বলা হয়, ওই হামলায় কোনো গোষ্ঠী জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।

হাফিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, স্টেইনস ও তার ১০ এবং ৬ বছর বয়সী দুই শিশু সন্তানকে হত্যার কারণ হিসেবে অভিযোগ তোলা হয়, তারা ওই এলাকায় হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করছিলেন।

২০০৩ সালে ফ্রন্টলাইন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তখনকার কেন্দ্রীয় সরকার (বিজেপির নেতৃত্বাধীন) এই ঘটনায় বজরং দলের জড়িত থাকার অভিযোগ যাচাই পর্যন্ত করেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়, কোনো বৈধ দল এ ধরনের বর্বরোচিত অপরাধ ঘটাতে পারে না। সেসময় বজরং দল বৈধ ছিল।

যদিও পরে মামলায় বজরং দলের সদস্য দারা সিং, তার সহযোগী মাহেন্দ্র হেমব্রমসহ ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপর দারা সিংকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু দু’বছর পর উড়িষ্যার হাইকোর্ট দারাসিংয়ের মৃত্যুদণ্ড লঘু করে দেয়। মুক্তি দিয়ে দেয় অপর ১১ জনকে। তবে সারেঙ্গিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি।  

বিবিসি ও হাফিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ২০০২ সালে উড়িষ্যার বিধানসভায় উগ্রপন্থি একটি দল যে হামলা চালায়, তাতে জড়িত ছিল বজরং দলও। হামলাকারীরা সেসময় অযোধ্যায় বিতর্কিত একটি জমি ‘রামের জন্মভূমি’ দাবি করে সেটিকে রামমন্দিরের নির্মাণে দেওয়ার জন্য দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল।

বিধানসভায় ওই হামলার পর দাঙ্গা এবং সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে যে মামলা হয়, তার আসামি হিসেবে ৬৫ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন সারেঙ্গিও।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুসারে, সারেঙ্গির বিরুদ্ধে ১০টি ফৌজদারী অপরাধের মামলা হয়। যদিও একটি মামলায়ও তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি।

এবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে সারেঙ্গি ২০০৪ ও ২০০৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা আসনে লড়েও সেবার হেরে গিয়েছিলেন তিনি।

তিনি এখন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পশুপালন, দুগ্ধ এবং মৎস্যজীবী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি জীবনযাপন একেবারেই সাদামাটা। বিয়ে করেননি, কুঁড়েঘরে থাকেন। নির্বাচনে সাইকেল চালিয়ে প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছেন তিনি। এই সাদামাটা চালচলনেই জায়গা করে নিয়েছেন মোদীর মন্ত্রিসভায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।