মস্কো এই ‘চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে’ এবং ‘চুক্তিটি মানতে তাদের কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না’ বলে অভিযোগ তুলে শুক্রবার (২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে আইএনএফ চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য গত ফেব্রুয়ারিতেই চুক্তিটি থেকে দু’পক্ষ নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
শুক্রবারের বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘রাশিয়া যে চুক্তিটি জেনেবুঝে লঙ্ঘন করে চলেছে, সে চুক্তিতে একক পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না। চুক্তির শর্ত রাশিয়া মেনে না চলায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বার্থ বিপন্ন হয়েছে, অন্যদিকে তাদের চুক্তি লঙ্ঘনকারী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ বাঁধে সেটার সমাপ্তি টানতে অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে ঐতিহাসিক আইএনএফ চুক্তি হয়েছিল।
কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে এই চুক্তি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, মস্কো যা করছে তা আইএনএফ চুক্তির লঙ্ঘন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে ৬ মাসের মধ্যে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আমেরিকানরা চুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, তাই আমরাও এই চুক্তি স্থগিত করেছি। তারা যেহেতু চুক্তি মানছে না, আমরাও মানবো না। রাশিয়া নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি শুরু করবে, যেখানে থাকবে শব্দের চেয়ে ২০ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও। ’
আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সরে যাওয়ার ঘোষণায় তখনই শঙ্কা প্রকাশ করে ইউরোপের নেতৃত্ব। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই চুক্তি না থাকলে দুই পারমাণবিক পরাশক্তির ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হতে পারে ইউরোপ।
এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘারিনি তখন বলেছিলেন, ‘ইউরোপ স্নায়ুযুদ্ধের সময় দুই পরাশক্তির ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছিল, আমরা এর পুনরাবৃত্তি চাই না। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াশিংটনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে সেই শঙ্কার কথাটিই জানিয়ে বলেন, চুক্তিটি লঙ্ঘন করে রাশিয়া তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কিছু ক্রজ মিসাইল মোতায়েন করেছে। ওইসব মিসাইল ইউরোপের ‘স্পর্শকাতর টার্গেটে’ আক্রমণ করতে সক্ষম।
যদিও রাশিয়া বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, মিথ্যা অজুহাত তুলে যুক্তরাষ্ট্র আসলে চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, যেন তারা নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে পারে।
শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলায় রাশিয়ার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ভৌগোলিক রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকা রাশিয়াও আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
এইচএ/