এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো বটেই, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও চলছে নানা আলোচনা-বিশ্লেষণ।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকদিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরে তীব্র আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদেরও বিশ্বাস, খুব শিগগির কাশ্মীরে বড় কিছুই ঘটতে যাচ্ছে।
এসব গুঞ্জন-গুজবের মধ্যেই রোববার (৪ আগস্ট) দিল্লিতে জরুরি বৈঠক করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাপ্রধান অরবিন্দ কুমার, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইংয়ের (র) সামন্ত গোয়েল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গউবাসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের দিক থেকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বড় জঙ্গি হামলা চালানোর চেষ্টা চলছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। এ কারণেই কাশ্মীর উপত্যকায় অতিরিক্ত ১০ হাজার সেনা পাঠানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ও তল্লাশি।
তবে, সেনা মোতায়েনের এ সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়, সেটি বাতিল করা ছিল মোদি-অমিত শাহ জুটির অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। আর তারাই এখন প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সঙ্গে আছে লোকসভায় বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সুতরাং, সংসদীয় পদ্ধতিতে বিজেপি জোট চাইলেই কাশ্মীর নিয়ে তাদের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পরে। আর সেটি করলে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে কাশ্মীরিদের ভেতর, তা নিয়ন্ত্রণেই বাড়তি সেনা পাঠানো হয়েছে কি-না, তা সময়ই বলে দেবে।
ভারতীয় সংবিধানের দু’টি অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে অন্য রাজ্যগুলো থেকে কিছুটা বেশি মর্যাদা দেয়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সেখানে এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। তাদের নিজস্ব সংবিধান আছে, পতাকা আছে, আছে আলাদা জাতীয় সংগীতও। এছাড়া, সংবিধানের ৩৫-ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাশ্মীরের বাসিন্দা নয় এমন কেউ সেখানকার সম্পদের মালিক হতে পারবে না।
মূলত, এ অনুচ্ছেদ দুটোই বাতিল করতে চায় বিজেপি সরকার। তবে ৩৫-ক নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। একারণে, বিকল্প পথ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ ভেঙে আলাদা তিনটি রাজ্য ঘোষণা করতে পারে সরকার, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। কারণ, এটি করলেই কাশ্মীরের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে। এছাড়া, মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যটিতে অমুসলমানদের সংখ্যা ও ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করার পরিকল্পনা থাকতে পারে বলেও ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কারণ, সামনেই কাশ্মীরের স্থানীয় নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে দ্রুত।
রাজনৈতিক কৌশল হোক বা নিরাপত্তার খাতিরেই, কাশ্মীরে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার দ্রুত অবসান হোক, এমনটাই আশা সাধারণ মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৯
একে