মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ ছয় মাসব্যাপী জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চালানো (এফএফএম) এক তদন্তে দেখা যায়, মিয়ানমারের মাল্টিবিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক ও পৃষ্ঠপোষক দেশটির সেনাবাহিনী ‘তাতমাদাও’।
মিয়ানমারের ২০১৮-২০১৯ সালের বাজেটে প্রায় ৭৭ লাখ টাকার ওই চুক্তি প্রস্তাবিত হয় বলে জানায় এফএফএম।
এদিকে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনের পর এক বিবৃতিতে গার্ডিয়ানকে ভেরিপোস জানায়, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে সব ধরনের আইন ও বিধি মোতাবেক সিঙ্গাপুরের এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মিয়ানমার ন্যাভাল হাইড্রোগ্রাফিক সেন্টারের কাছে জিপিএস পণ্য সরবরাহ করেছিল।
ভেরিপোস জানায়, হাড্রোগ্রাফিক জরিপসহ বেসামরিক নৌসংক্রান্ত কাজে আমাদের পণ্য ব্যবহৃত হয়। আমরা সর্বোচ্চ নৈতিক আচরণ প্রদর্শন করতে ও জাতিসংঘের যে কোনো বিধান মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিশীল। উত্তর-পূর্ব স্কটল্যান্ডভিত্তিক ভেরিপোস উপকূলবর্তী অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং নৌসংক্রান্ত প্রযুক্তি সরবরাহ করে থাকে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতা চালানোর মূলহোতা তাতমাদাও। সে সময় অসংখ্য গ্রাম ধ্বংস ও হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা, নারীদের ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক তৎপরতা চালানো হয়। এতে করে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগও রয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসার জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলোকে নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, তাতামাদাও’র সঙ্গে যে কোনো ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনে সহায়তার আশঙ্কা তৈরি করে।
তাতমাদাও’র সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে সম্পৃক্ত মোট ৫৯টি বিদেশি কোম্পানির হদিশ পায় জাতিসংঘ। এর মধ্যে ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নরওয়ের কোম্পানিও রয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি পর্যায়ে চীন, ভারত, রাশিয়া, ইসরায়েল, ইউক্রেন, কোরিয়া ও ফিলিপাইন বিভিন্ন সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে জঙ্গি বিমান, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ডুবোজাহাজ, হ্যান্ডগান, সাঁজোয়া গাড়িসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক মালামাল বিক্রি করেছে। সর্বশেষ বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতও মিয়ানমারকে সাবমেরিন বিদ্ধংসী টর্পেডো সরবরাহ করেছে।
তাতমাদাও’র জ্যেষ্ঠ নেতাদের মালিকানাধীন মিয়ানমারের দুইটি বিশাল হোল্ডিং কোম্পানি কীভাবে বিশাল বাণিজ্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে সে বিষয়েও তুলে ধরা হয় জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ওই প্রতিবেদনে। ওই দুই কোম্পানি হলো- মিয়ানমার ইকোনোমিক করপোরেশন (এমইসি) ও মিয়ানমার ইকোনোমিক হোল্ডিংস লিমিটেড (এমইএইচএল)। যৌথভাব এ দুই বাণিজ্যশক্তি মিয়ানমারের ১২০টি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলোর বাৎসরিক টার্নওভার শত শত কোটি টাকা।
২০১৭ সালে স্বায়ত্তশাসিত ব্যবসা খাত- জেড, রুবি ও স্বর্ণ খনন খাত, পর্যটন, পরিবহন, নির্মাণ, খাদ্য, পানীয়, কৃষি ও ইন্স্যুরেন্স খাত থেকে তাতমাদাও’র টার্নওভার ৯৮ বিলিয়ন পাউন্ডেরও অধিক।
এফএফএমের অন্যতম বিষেশজ্ঞ ক্রিস্টোফার সিডোটি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের ভেতরেও আরেকটি রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে এ সেনাবাহিনীই রাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটিই কর্তৃত্বশীল শক্তি। এটিই ভবিষ্যত মিয়ানমারের মূল বাধা। সেনাবাহিনীকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা থেকে সরানো না গেলে এ দেশে মানবাধিকারের কোনো ভবিষ্যত নেই।
‘আমরা সুপারিশ করি, মিয়ানমারের ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক। যাতে করে এটি স্পষ্ট হয় যে, তাদের সঙ্গে কোনো অস্ত্র চুক্তি করা যাবে না। ’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক অভিযানের পর তাতমাদাও ওই অভিযানের সমর্থনে ও সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অংশ হিসেবে ৮০ লাখ পাউন্ডেরও অধিক তহবিল সংগ্রহ করে।
এদিকে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মিয়ানমার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন প্রতাখ্যান করে, কেননা তা ভিত্তিহীন অভিযোগের ওপর দাঁড়ানো। আমরা পরিষ্কারভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছি, এবং আমরা এফএফএমের এ প্রতিবেদন অস্বীকার করি।
আরও পড়ুন>>>মিয়ানমারকে সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেডো দিলো ভারত
মিয়ানমারকে এবার সাবমেরিন দিচ্ছে ভারত
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৯
এইচজে/এসএ