আরও পড়ুন> কাশ্মীরিদের জন্য ১ মাস আগেই প্রস্তুত হয় বিশেষ কারাগার
এরমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি মিডিয়া সেন্টার খোলা হলে কিছুটা আশার আলো দেখতে পান গণমাধ্যমকর্মীরা। কেন্দ্রের চারটি কম্পিউটার ও একটি মোবাইল ফোনই খবর পাঠানোর একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে তাদের কাছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন> কাশ্মীর সীমান্তে গুলি: ৫ ভারতীয় ৩ পাকিস্তানি সেনা নিহত!
জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের জেরে গত ৫ আগস্ট থেকে অবরুদ্ধ কাশ্মীর উপত্যকা। ওই দিন থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবার আগে এর প্রভাব পড়ে খবর আদান-প্রদানে। বিশেষ ইন্টারনেট লাইনগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
দুই দিন ধরে একটা খবরও আদান-প্রদান করতে পারেননি স্থানীয় সাংবাদিকরা। শুধু যেসব টেলিভিশন চ্যানেলের আউটডোর ব্রডকাস্টার (ওবি) ভ্যান রয়েছে, সেগুলো দিয়ে কিছু খবর উপত্যকার বাইরে পাঠানো সম্ভব হয়। বাকি সাংবাদিকদের অফিসের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। তারা মরিয়া হয়ে উঠছিলেন। এ পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো কাশ্মীরের বড় খবরগুলো বাইরে আসে যখন, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কিছু কর্মী ফ্লাশড্রাইভে খবর দিয়ে একজনকে প্লেনে করে দিল্লি পাঠান।
আরও পড়ুন> বিদেশ যেতে না দিয়ে কাশ্মীরি নেতা শাহ ফয়সালকে গৃহবন্দি
অন্তত এক সপ্তাহ ধরে বেশিরভাগ সাংবাদিকই এ পথ অনুসরণ করেছেন। লিখিত খবর পড়ে রেকর্ড করে তা সহযোগী চ্যানেলের ওবি ভ্যানের সাহায্যে পাঠাতে থাকেন অনেকেই। মূল অফিসে সেসব খবর শুনে ফের টাইপ করে প্রকাশ করা হতো।
কাশ্মীরে নিযুক্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের পথ না পেয়ে তাদের খোঁজে লোকও পাঠায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রতিনিধিকে খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন।
মিডিয়া সেন্টার বিড়ম্বনা
এর প্রায় এক সপ্তাহ পর সাংবাদিকদের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টার খোলে সরকার। এটি থেকে সাংবাদিকরা ইন্টারনেট বা ফোনকলের মাধ্যমে খবর পাঠাতে পারবেন। এরপর থেকেই সেখানে প্রতিদিন শতাধিক সাংবাদিক জড়ো হতে থাকেন। কিন্তু, তাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইন্টারনেটের শম্বুকগতি।
আরও পড়ুন> নিষেধাজ্ঞা উঠলেও কাশ্মীরি নেতাদের মুক্তির খবর নেই
কাশ্মীরে কর্মরত আউটলুক ম্যাগাজিনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাসির গানাই বলেন, এটা খুবই পীড়াদায়ক। মিডিয়া সেন্টারে ইমেইল ব্যবহারের চেয়ে প্লেনে চড়ে দিল্লি যাওয়া সহজ। কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সংখ্যা একটা সমস্যা, তার ওপর আছে ইন্টারনেটের গতি।
সিএনএন ও নিউজ১৮’র ব্যুরো চিফ মুফতি ইসলাহ বলেন, ইন্টারনেটের গতি এমন যে, সাত মিনিট পরও আমার মেইল লোড হয়নি। এতে কাজ হয় না।
তিনি বলেন, আমি এ ধরনের পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। যোগাযোগ হয়তো বন্ধ করা হয়, কিন্তু এটা তারচেয়েও বেশি কিছু। সবচেয়ে বাজে সময় এটি।
আরও পড়ুন> সিনেমা দেখে সময় কাটান গৃহবন্দি ওমর, বই পড়েন মেহবুবা
এমন পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলাহ বলেন, পুরোপুরি অন্ধ হয়ে ছিলাম। যদি সকাল ১০টায় লাইভে (সরাসরি সম্প্রচার) যেতে হতো, সকাল ৭টা-৮টা থেকেই অফিসের সঙ্গে যুক্ত হতাম। কখন কী করতে হবে, তা বলার কোনো উপায় ছিল না। এজন্য ওবি ভ্যানের মাধ্যমে সারাদিন যুক্ত থাকতাম।
বিকল্প উপায়
খবর টাইপ করে তা ফ্লাশড্রাইভে নিয়ে ইমেইল করা- এটা সাংবাদিকদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। এটি করতে সময় লাগে বড়জোর কয়েক মিনিট। কিন্তু, মিডিয়া সেন্টারে এ কাজটুকু করতেই লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা। অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে একদিনের কাজ পাঠাতে হয় পরের দিন।
আরও পড়ুন> ‘স্বাধীনতা দিবসেও পশুর মতো বন্দি কাশ্মীরিরা’
একই অবস্থা মোবাইল ফোনেরও। এত মানুষের জন্য ফোন মাত্র একটি। একারণে কল করতে রেজিস্টারে নাম লিখে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নবীন শর্মা নামে এক সাংবাদিক বলেন, যদি আধা ঘণ্টা পরই মোবাইল হাতে পান, তবে আপনি খুবই ভাগ্যবান। বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিসে ফোন করার দরকার ছিল। রেজিস্টারে নাম লিখে দেখা যায়, আগে আছে আরও ৪৮ জন। অর্থাৎ, কল করতে পারতাম শুক্রবার সকালে।
তিনি বলেন, একটা খবর লিখে কল করে জানাতেই সারাদিন লেগে যায়। একারণে ঘুরে ঘুরে ভালো খবর সংগ্রহ করার কোনো সুযোগ নেই। যতক্ষণে একটা খবর লিখে ফাইল করবেন, ততক্ষণে নতুন ইস্যু এসে হাজির হবে।
আরও পড়ুন> কাশ্মীর-ভুলের জন্য মোদীকে বড় মূল্য দিতে হবে: ইমরান
এদিকে, ফটো সাংবাদিকদের পরিস্থিতি আরও করুণ।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায় কর্মরত এক ফটো সাংবাদিক বলেন, ইন্টারনেট অনিশ্চিত, গতির অবস্থাও করুণ। তিনটি ছবি আপলোড করতেই দুই ঘণ্টা লেগে যায়।
এ কারণে বেশির ভাগ সাংবাদিকই ছবি ও ভিডিও ফ্লাশড্রাইভে ভরে হাতে হাতে পাঠাচ্ছেন।
নিরাপত্তা শঙ্কা
ব্যবহারকারীর তুলনায় কম্পিউটারের সংখ্যা আর ইন্টারনেটের গতি ছাড়াও সরকারি মিডিয়া সেন্টার নিয়ে আরেকটি বড় অভিযোগ রয়েছে। সেটি হচ্ছে নিরাপত্তার শঙ্কা।
আরও পড়ুন> পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিমন্ত্রণ বাতিল করছে কাশ্মীরিরা!
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মীর হিলাল বলেন, এখানে বড় একটা হুমকি আছে। সাংবাদিকরা এ জায়গা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। তাদের বিশ্বাস, এসব কম্পিউটার হ্যাক করে ইমেইলে লগ-ইন করা হতে পারে। এটাকে মিডিয়া সহায়তা কেন্দ্র বলা ভুল। এটা আসলে মিডিয়া বন্দিশিবির।
সাংবাদিকদের দাবি সত্ত্বেও প্রেসক্লাবে না গিয়ে একটি বেসরকারি হোটেলে মিডিয়া সেন্টার খোলায় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন> ছেলেকে বলেছি, ঈদে বাড়ি এসো না: কাশ্মীরি মা
তবে, সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ অ-কাশ্মীরি সাংবাদিক এ হোটেলে থাকায় মিডিয়া সেন্টার হিসেবে এ জায়গাটিকেই বেছে নেওয়া হযেছে।
সূত্রমতে, হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন সরকারের কাছ থেকে ৫০ হাজার রুপি বিল আদায় করছে।
সরকারপন্থিদের বিশেষ সুবিধা
শতাধিক স্থানীয় সাংবাদিকের জন্য মাত্র চারটি কম্পিউটার, একটি মোবাইল ফোন আর অতিমাত্রায় ধীর গতির ইন্টারনেট সেবা বরাদ্দ থাকলেও নির্বাচিত কয়েকজন সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন> কাশ্মীরের ‘অতীত গৌরব’ ফিরিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা মোদীর
স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, দিল্লি থেকে কিছু সাংবাদিক এসেছেন, যারা নিজেদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারছেন। তারা সহজেই টুইটার ব্যবহার করছেন। শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করছেন না আর তাদের বক্তব্যের প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে এসব সাংবাদিকদের হেলিকপ্টারে করে আনা-নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন> জম্মু-কাশ্মীরে কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে ঈদ উদযাপন
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
একে