রোববার (১৮ আগস্ট) নিউ জার্সিতে অবকাশযাপন শেষে ওয়াশিংটনে ফেরার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেন ট্রাম্প।
আধা-স্বায়ত্তশাসিত গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের জন্য একটি ‘অর্থনৈতিক বোঝা’ উল্লেখ করে ধনকুবের ট্রাম্প বলেন, মূলত এটি একটি বিশাল রিয়েল এস্টেট (আবাসন) সংশ্লিষ্ট ব্যাপার।
‘ডেনমার্ককে অনেক ঝক্কির মধ্যে ফেলেছে গ্রিনল্যান্ড। এর কারণে প্রতিবছর দেশটির ৭০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা) গচ্চা যায়। গ্রিনল্যান্ড নিয়ে লোকসানের মুখে আছে ডেনমার্ক। ’
এর আগে হোয়াইট হাউজের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলোও এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরে জানান, ‘কৌশলগত সুবিধা’ ও মূল্যবান খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রেও গ্রিনল্যান্ড কাজে আসবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়, নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট দুনিয়ায় শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তার অর্থ-সম্পদ আছে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর মানসিকতা থেকেই হয়তো ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডে ওই ব্যবসার কথা ভেবেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সুবিধার জন্য তার ওই অঞ্চল কেনার ব্যাপারে এর প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, কৌশলগত দিক থেকে এটা সুবিধাজনক, ফলে আমরা আগ্রহী। কিন্তু এটি নিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে আমরা যে খুব বেশি আলোচনা করবো, তা নয়। এটাই আমাদের আলোচনার মূল বিষয় নয়।
‘এটার স্বত্বাধিকারী ডেনমার্ক। আর তারা আমাদের খুব ভালো মিত্র। পৃথিবীর অনেক এলাকার সঙ্গে সঙ্গে ডেনমার্কের সুরক্ষায়ও আমরা কাজ করেছি। ওই জায়গা থেকেই ভাবনাটা এসেছে। ’
গ্রিনল্যান্ডে থুল নামে মার্কিন একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের এমন আগ্রহকে আগেই ‘উদ্ভট’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী। দ্বীপটির সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। ’
এছাড়া দ্বীপটির বাসিন্দারাও ট্রাম্পের এ আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দ্বীপের কুলুসুক এলাকার বাসিন্দা বেন্ট অ্যাবিলসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের ১৮৬৭ সালেও কিনতে চেয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও চেষ্টা করেছিল কেনার। এখনো তারা এ কাজ করে যাচ্ছে। ’
ট্রাম্পের আগে আরেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৬ সালে দ্বীপটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফরের কথা। সে সময় ড্যানিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে কোনোরকম আলাপ-আলোচনা হবে বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
তবে অন্য দেশের কাছ থেকে বিশাল ভূ-খণ্ড অঞ্চল কেনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ইতিহাস আছে। ১৮৬৭ সালে ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ বর্গ কিলোমিটারের ভূ-খণ্ড আলাস্কা কিনে নেয় দেশটি। অলাভজনক অঞ্চল ভেবে সে সময় আলাস্কাকে আমেরিকার কাছে বেচে দেয় রাশিয়া।
কিন্তু তার কিছুকাল পরই আলাস্কাতে আবিষ্কৃত হয় সোনার খনি। রাতারাতি বদলে যায় ওই অঞ্চলের গুরুত্ব। সেই আলাস্কা এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশাল এক সাফল্য। শুধু সোনার খনির কারণেই নয়, এর মধ্য দিয়ে আর্কটিক ও বেরিং সাগর অঞ্চলে নিজের ক্ষমতাও প্রতিষ্ঠিত করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, এখনও আলাস্কা হাতছাড়া হওয়ার আফসোস বয়ে বেড়ায় রাশিয়ার নেতৃত্ব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
এইচজে/এইচএ