এরপরও থেমে নেই গণতন্ত্রকামীদের এ আন্দোলন। ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, বরং দিনকে দিন আন্দোলনকারীর সংখ্যা আরও বাড়ছেই।
হংকং আন্দোলন নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে চীনা নাগরিকদের ৯৩৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। থেমে নেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষও। তারাও বন্ধ করেছে ফেসবুকের সাতটি পেজ, তিনটি গ্রুপ ও পাঁচটি অ্যাকাউন্ট।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এমন তথ্যই জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
টুইটার কর্তৃপক্ষ বলছে, হংকং আন্দোলন নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়াচ্ছে চীন। যেটিকে ‘চীনা সমর্থিত ভুল তথ্য ছড়ানোর ক্যাম্পেইন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে টুইটার। এরই জেরে ওই ৯৩৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ ওই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে হংকংয়ে ‘রাজনৈতিক অনৈক্য’র বীজ বপনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল। একইসঙ্গে চীনা সরকার পরিচালিত কোনো সংবাদমাধ্যম থেকে বিজ্ঞাপনও নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার।
টুইটার কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্ধ করে দেওয়া ওই অ্যাকাউন্টগুলো মূলত চীনা নাগরিকদের। সেগুলো ব্যবহার করেই হংকং আন্দোলনের ‘বৈধতা ও রাজনৈতিক অবস্থান’ এর ক্ষতির প্রচেষ্টাই চালানো হচ্ছিল।
ওই ৯৩৬টি অ্যাকাউন্ট ছাড়াও আরো অন্তত দুই লাখ অ্যাকাউন্ট সক্রিয় হওয়ার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে টুইটার। কারণ ওই অ্যাকাউন্টগুলোও হংকং আন্দোলন নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই খোলা হচ্ছিল।
‘এ কাজগুলো চীনের সমর্থনেই করা হচ্ছে’, এমনটিই বেরিয়ে এসেছে টুইটার কর্তৃপক্ষের তদন্তে। এটির পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণও তাদের হাতে রয়েছে বলেই জানিয়েছে টুইটার। এছাড়া ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও তারা জানিয়েছে।
অন্যদিকে টুইটার কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপের পর থেমে নেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষও। তারাও ফেসবুক থেকে সাতটি পেজ, তিনটি গ্রুপ ও পাঁচটি অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নিয়েছে।
ফেসবুকের সাইবার সিকউরিটি পলিসি’র প্রধান নাথানিয়েল গ্লেইচার বলেন, ওইসব অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে প্রায়ই চলমান হংকং আন্দোলনসহ বিভিন্ন স্থানীয় রাজনৈতিক ইস্যুতে পোস্ট দেওয়া হত। এ কাজের নেপথ্যে যারা ছিল, তারা তাদের পরিচয় গোপন রেখেই এসব কাজ চালাচ্ছিল। তবে এসব কাজের সঙ্গে চীনা সরকারের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা আমাদের তদন্তে পেয়েছি।
অপরাধ প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা হংকং। যে বিক্ষোভ এখন মোড় নিয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনে। বিক্ষোভের মুখে অঞ্চলটির প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বিলটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন এখন আর থামছে না।
অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, চীন যদি চায় সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিজ ভূ-খণ্ডে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে। আইনে বলা হয়েছে, বেইজিং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান থেকে পালিয়ে আসা কোনো অপরাধীকে ফেরত চাইলে তাকে ফেরত দিতে হবে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হংকংয়ের এক তরুণ তাইওয়ানে এক নারীকে হত্যা করে হংকংয়ে চলে আসেন পালিয়ে। তখন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করতে তাইওয়ান ফেরত চাইলে হংকং আইনি জটিলতার কথা বলে। এ প্রেক্ষাপটে প্রত্যর্পণ আইনটি হংকংয়ের নিজস্ব আইনে প্রণীত করার প্রস্তাব আসে।
সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত হংকং ১৯৭৭ সালে চীনের অধীনে ফেরার পর থেকে ‘এক রাষ্ট্র দুই নীতি’র অধীনে পরিচালিত। যদিও গত দুই দশক ধরে নানা ইস্যুতে চীন সরকারের সঙ্গে কড়াকড়ি চলছে অঞ্চলটির।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
এসএ/