ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্যাপক মতানৈক্যে ‘নিষ্ফল’ সমাপ্তির পথে জি-৭ সম্মেলন 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
ব্যাপক মতানৈক্যে ‘নিষ্ফল’ সমাপ্তির পথে জি-৭ সম্মেলন 

ফ্রান্সে তিন দিনব্যাপী ৪৫তম জি-৭ সম্মেলনের পর্দা নামতে চলেছে। তবে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও ব্যাপক মতানৈক্যের কারণে প্রায় নিষ্ফল বলা হচ্ছে এ সম্মেলনকে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) ফ্রান্সের দ্বীপশহর বিয়ারিজেই সমাপ্তি টানা হবে এ সম্মেলনের।

সাম্প্রতিক ইরান সঙ্কট থেকে শুরু করে এবারের সম্মেলনে আলোচনায় আসে জি-৭ গ্রুপে পুনরায় রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব, বিশ্বব্যাপী চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, ব্রেক্সিট ইস্যু, জলবায়ু সঙ্কট, আমাজনের দাবানলসহ একাধিক বিষয়।

 

রোববার (২৫ আগস্ট) বিয়ারিজে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের আকস্মিক উপস্থিতিতে নতুন মোড় নেয় সম্মেলন। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের পরমাণু চুক্তি ভেস্তে যাওয়া এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউরোপের করণীয় নিয়ে সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে সম্মেলনে উপস্থিত হন জাভেদ জারিফ।  

ফ্রান্সের সরকারি সূত্র জানায়, ইরান প্রশ্নে প্রধান করণীয়গুলো নিয়ে একমত হয়েছেন বিশ্ব নেতারা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানায়, এ ব্যাপারে তাদের করণীয় তারাই নির্ধারণ করবে। অন্যদিকে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলে তাদের পুরোপুরি পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে হবে।  

রোববার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে- এটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে।  

জি-৭ সম্মেলনে জারিফের এ ‘আকস্মিক’ উপস্থিতি ইরানের পরমাণু চুক্তি রক্ষা বিষয়ক আলোচনায় নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।  

এদিকে জি-৭ গ্রুপে পুনরায় রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে প্রস্তাব তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ইউরোপ ও কানাডা এ ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখায়। আপত্তি হিসেবে তারা ‘অবৈধভাবে’ রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিষয়টি সামনে আনে। ২০১৫ সালে এ কারণেই জি-৭ থেকে বহিষ্কৃত হয় রাশিয়া।  

অন্যদিকে রোববার সকালে ব্রেক্সিট ইস্যু ও নতুন বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।  

বরিসকে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য খুব দ্রুত ‘অভূতপুর্ব বিশাল এক বাণিজ্য চুক্তিতে’ পৌঁছাতে পারবে।     

এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, যেহেতু কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে যুক্তরাজ্যের কোনো বাধা নেই, সেজন্য এটি সম্ভব হবে। এ ধরনের বাধা আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ক্ষেত্রে।  

ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্যকে ইইউর সমালোচনা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
 
ব্রেক্সিট ইস্যুতে বরিসকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ব্যাপক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, বরিসের কোনো পরামর্শের দরকার নেই। এ কাজের ব্যাপারে তিনি যোগ্য ব্যক্তি।

অন্যদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে দহরম মহরম দেখা গেলেও ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপের মিত্র দেশগুলোকে হতাশ করেছেন বরিস জনসন।  

বরিস বলেন, আগামী ৩১ অক্টোবর তার দেশ যদি কোনো চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তিনি ব্রেক্সিট বিলবাবদ কোনো টাকাপয়সা দিতে পারবেন না।  

সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে রোববার বরিস বলেন, আমরা যদি চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যাই, তাহলে ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড দেওয়ার ব্যাপারটি বৈধ থাকে না।  

যদিও ইইউ সূত্র জানায়, বৈধভাবেই যুক্তরাজ্যের কাছে ইইউর এ পরিমাণ অর্থ পাওনা। এ পাওনা মেটাতে ব্যর্থ হলে, এটি ঋণ হিসেবে থেকে যাবে।   

ব্রেক্সিটের ব্যাপারে বল এখন যুক্তরাজ্যের মাঠে বলে এক ইইউ কর্মকর্তা বলেন।  

এসব ছাড়াও বাণিজ্যযুদ্ধ ও জলবায়ু নিয়ে আলোচনা হয় সম্মেলনে। এসব প্রসঙ্গেও ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় বাকিদের। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক ইরান, চীন, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের ওপর বাণিজ্যকর, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই চলেছেন। এ ব্যাপারে তারা কোনো লাগাম টানার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।  

অন্যদিকে জলবায়ু প্রশ্নেও বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ব্যাপারটিকে তিনি তেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না বলে নানা সময়ে বলেছেন। ফলে এ ব্যাপারে তার দিক থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।  

এছাড়া ফেসবুক, গুগলের মতো ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে করারোপ করার ব্যাপারে ফ্রান্সের প্রস্তাব থাকলেও ট্রাম্পের দেশ সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে।  

তবে আমাজনে দাবানল ইস্যুসহ দু-একটি ব্যাপারে কর্মপন্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে একমত হতে দেখা যায় বিশ্ব নেতাদের।

জি-৭ গ্রুপ পৃথিবীর ‘ফুসফুস’খ্যাত আমাজনে চলমান দাবানল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারোকে সহায়তার আশ্বাস দেন বিশ্ব নেতারা। এ অরণ্যে পুনরায় বৃক্ষরোপণেও তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানান।  

এছাড়া বৈষম্য, বিশেষ করে লিঙ্গ বৈষম্য, জি-৭ ও আফ্রিকার যৌথ অংশীদারিত্ব, জীববৈচিত্র্য ও ডিজিটাল মাধ্যমের মুক্ত, অবাধ ও নিরাপদ রূপান্তরের বিষয়েও একমত হন তারা।  

এদিকে জি-৭ সম্মেলন শুরুর আগে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক এবারের সম্মেলনকে অনেক জরুরি বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু প্রত্যাশিত সে সব সাফল্যের মুখ না দেখেই পর্দা নামছে ৪৫তম জি-৭ সম্মেলনের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এইচজে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।