সোমবার (২৬ আগস্ট) ইরান সরকারের মুখপাত্র আলী রাবিই সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তার ভাষ্যে, ট্যাংকারটিতে থাকা ১৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ২১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বেচে দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরিয়ায় ইরান তেল নিয়ে যাচ্ছে- এমন অভিযোগে গত ৪ জুলাই জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে আদ্রিয়ান দারিয়া-১ নামের সুপার ট্যাংকারটি আটক করে যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনী। এর প্রতিক্রিয়ায় পারস্য উপসাগরে একটি ব্রিটিশ ট্যাংকার আটক করে ইরান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।
অবশ্য ইরান শুরু থেকেই সিরিয়ায় তেল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। শেষমেশ, ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরিয়া বা অন্য কোথাও ট্যাংকারটি যাবে না, এমন শর্তে ইরান লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে সেটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটেনশাসিত জিব্রাল্টার অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু, ১৬ আগস্ট ইরানের ওই ট্যাংকার আটক করতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত পরোয়ানা জারি করলে এর মুক্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ট্যাংকারটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, তেলবাহী ট্যাংকারটি ইরানের ‘অভিজাত বাহিনী’ রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানির। কিছুদিন আগে এ বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে ট্যাংকারটি না ছাড়তে জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায় তারা।
তবে জিব্রাল্টার প্রশাসন জানায়, তাদের পক্ষে ওয়াশিংটনের অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়। কারণ, এ অঞ্চল ইউরোপীয় আইনের প্রতি দায়বদ্ধ। ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় অবস্থান ভিন্ন। তাছাড়া ইউরোপ, যুক্তরাজ্য বা জিব্রাল্টারের কাছে আইআরজিসি সন্ত্রাসী সংগঠনও নয়।
পরে ১৯ আগস্ট জিব্রাল্টার থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রিসের কালামাতা শহরের উদ্দেশে রওয়ানা দেয় আদ্রিয়ান দারিয়া-১। কিন্তু এরমধ্যেই গুঞ্জন ছড়ায় সুপার ট্যাংকারটি ভূমধ্যসাগরে আটক করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেয় ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের কিছু ঘটলে উন্মুক্ত সমুদ্রপথ জাহাজ চলাচলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এরপরও মার্কিন প্রশাসন ইরানি ট্যাংকারটির ওপর নজরদারি করছিল বলে খবর ছড়ায়।
এই পরিস্থিতিতে ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, তেলবাহী ট্যাংকারটি হঠাৎ গন্তব্য বদলে ফেলেছে। গ্রিসের কালামাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেও পরে তাদের গন্তব্যে দেখা যায় তুরস্কের মারসিন বন্দরের নাম।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নানা বিশ্লেষণ-মন্তব্যের মধ্যেই ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানালো, সাগরে ভাসমান থাকা অবস্থায়ই ট্যাংকারটির তেল বেচে দিয়েছে তারা। এখন অজ্ঞাত ওই তেল ক্রেতা শক্তিই এই জাহাজের গন্তব্য ঠিক করবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই তেলের মালিক এখন অন্য কেউ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ট্যাংকারটি ঘিরে তাদের আগের চিন্তা-ভাবনায় থাকতে পারবে না। অর্থাৎ তারা যদি আগে ট্যাংকারটি আটক করার চিন্তা করেও থাকে, তবে সেখান থেকে সরে আসতে হবে। কারণ তেলের ক্রেতাপক্ষকেও যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয় প্রতিপক্ষ বানাতে চাইবে না।
যদিও ইরানের তেল বেচে দেওয়ার এই দাবির জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মন্তব্য মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এইচএ/