সংঘাত, অস্ত্র, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল ২০১৮ সালেই বিশ্বের সামরিক ব্যয় ছিল ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
এসআইপিআরআইয়ের সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজমেন বলেন, ‘(সামরিক খাতে) এভাবে ব্যয় বাড়ার ঘটনা অবশ্যই সতর্কবার্তা। বলছি না এটা যুদ্ধের দিকে ধাবিত করছে, তবে বিষয়টি যথেষ্ট ভাবনার। ’
স্নায়ুযুদ্ধের পর (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমান রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা) বিশ্বের সামরিক ব্যয় সবচেয়ে কম ছিল ১৯৯৮ সালে। কিন্তু ২০০১ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হলো, এরপর থেকে আবারও বাড়তে থাকে সামরিক ব্যয়।
এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন মতে, সামরিক ব্যয় বাড়ানোর প্রতিযোগিতার নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সামরিক ব্যয় বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। তাদের রয়েছে ১১টি বিমানবাহী রণতরী, পরমাণু বোমা, নতুন অভিজাত যুদ্ধবিমান এবং ২১ লাখেরও বেশি সৈন্য। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক শক্তি হিসেবে দেখেন।
ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টার মাধ্যমে সামরিক ব্যয় কমাতে বারাক ওবামা প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু এখন আবারও বেড়েই চলেছে দেশটির সামরিক ব্যয়। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাশিয়া ও চীনের সামরিক ব্যয়ও।
সামরিক খাতে খরচ করার ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। ১৯৯০ সালে দেশটি খরচ করতো বিশ্বের সামরিক ব্যয়ের মাত্র ২ শতাংশ। আর এখন তারা খরচ করছে ১৪ শতাংশ।
চীন গত দশকে দু’টি বিমানবাহী রণতরী তৈরি করেছে। আরও একটি রণতরীর নির্মাণকাজ চলছে। যুদ্ধবিমানের আধুনিকায়ন করছে তারা। বাড়িয়েছে সৈন্য সংখ্যাও। একইসঙ্গে নতুন নতুন প্রযুক্তির পাশাপাশি হাইপারসনিক (শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ গতিসম্পন্ন) অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে দেশটি প্রচুর বিনিয়োগ করছে।
এছাড়া গত তিন বছরে ভারত সামরিক খাতে ১১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করেছে। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান সৌদি আরবের পরপরই। অর্থাৎ সৌদি আরবও সামরিক খাতে ব্যয়ের প্রতিযোগিতায় প্রথম দিকেই আছে। অবশ্য ২০১৮ সালে সামরিক খাতে খরুচে দেশগুলোর তালিকার পাঁচটি দেশের মধ্য থেকে ছিটকে গেছে রাশিয়া। যদিও ইউরোপের ২৯টি দেশের সামরিক মঞ্চ উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটের (ন্যাটো) দুশ্চিন্তার কারণ এই রাশিয়াই। অন্তত ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় আগ্রাসন এবং ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর।
অবশ্য ন্যাটোও কম যায় না। তারাও ২০১৮ সালে সামরিক খাতে ৯৬৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এটি ওই বছরে বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৫৩ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং শঙ্কাই এই অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু পরিস্থিতির লাগাম এখনই টানতে না পারলে এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রচারণাকে কার্যকর করতে না পারলে মানবসভ্যতাই হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
এইচএডি/এইচএ/