ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় কূটনীতিকের বক্তব্যে আলোচনার ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় কূটনীতিকের বক্তব্যে আলোচনার ঝড়

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদায় সংবিধানে সংরক্ষিত অনুচ্ছেদ বাতিলের পর সেখানে বিক্ষোভ ঠেকাতে ভারত সরকারের পদক্ষেপের সমর্থনে দেশটির যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত এক কূটনীতিকের বক্তব্য আলোচনার ঝড় তুলেছে। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারতের বাড়াবাড়িকে হালকা প্রমাণ করতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনকে তুলনা করায় এই আলোচনার ঝড় উঠেছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্কে নিযুক্ত ভারতের কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী কাশ্মীরের প্রবাসী পণ্ডিতদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের সামনে ইতোমধ্যে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রয়েছে…যদি ইসরায়েলি জনগণ পারে…’।

এই মন্তব্যসহ ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনা-নিন্দা শুরু হয়।

পাকিস্তানসহ কিছু মুসলিম দেশ কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন-পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলেও ভারত সরকারের কর্মকর্তারা তা বারবারই প্রত্যাখ্যান করছিলেন। নয়াদিল্লি দাবি করে আসছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্তই আছে। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি রয়েছে।

কিন্তু সরকারের এ ধরনের বক্তব্যের ঠিক উল্টো স্বরে সন্দীপ চক্রবর্তী কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রাসনবাদী পদক্ষেপেরই ইঙ্গিত দেন। ভারতের হিন্দু মৌলবাদীরা মনে করেন, একসময় কাশ্মীরী পণ্ডিতদের নির্যাতন করে নির্বাসিত করে সেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যদিও এ অভিযোগের পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় সরকার।

কনসাল জেনারেল সন্দীপ উপস্থিত পণ্ডিতদের উদ্দেশে বলেন, ‘কাশ্মীরের সংস্কৃতি হিন্দু সংস্কৃতি। আপনারা শিগগির কাশ্মীরে ফেরত যেতে পারবেন। ’

‘অনেকে (শ্রোতাদের মধ্যে) ইহুদী ইস্যু, ইসরায়েল ইস্যুতে কথা বলেছেন। …তারা তাদের সংস্কৃতিকে নিজেদের ভূমির বাইরেও দুই হাজার বছর বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই আমি মনে করি, আমাদেরও উচিত কাশ্মীরী সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা, কাশ্মীরী সংস্কৃতি হলো ভারতীয় সংস্কৃতি। …এটা হিন্দু সংস্কৃতি। আমরা কাশ্মীর ছাড়া ভারতকে কল্পনাই করতে পারি না। ’

পাকিস্তানসহ বিভিন্ন সমালোচক দেশের অভিযোগ, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপ সেখানে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির বীজবপণের জন্য। সন্দীপ চক্রবর্তীর এই বক্তব্যকে সেই অভিযোগের সঙ্গেই মিলিয়ে দিচ্ছেন অনেক টুইটার ব্যবহারকারী।

উপস্থিত পণ্ডিতদের ইসরায়েলি মডেল অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে সন্দীপ আরও বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করি, আমরা আমাদের জমি (কাশ্মীরে) ফেরত পাবো এবং আমাদের মানুষেরা (পণ্ডিতরা) ফিরে যাবে। আমাদের কাশ্মীরী ভাইয়েরা এখন বিভিন্ন অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে রয়েছে,… তারা অবশ্যই নিজেদের ঘরে ফিরে যাবেন। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত আছে…ইসরায়েলি জনগণ যদি পারে, তবে…।

সন্দীপ চক্রবর্তীর এই বক্তব্যের ওপর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘‘ভারত-অধিকৃত কাশ্মীর দখলের শতাধিক দিন হতে চললো, প্রকাশ হয়ে গেলো ভারতীয় সরকারের আরএসএস মতাদর্শের ফ্যাসিবাদী মানসিকতা। কাশ্মীরীদের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হলেও শক্তিধর দেশগুলো এখনো তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকে তাকিয়ে চুপসে রয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।