ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সকালে সোলেমানির জন্মস্থান দেশটির কেরমান প্রদেশের রাজধানী কেরমানে তার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানেই তার জানাজা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লাখো মানুষের ঢল নামে।
শেষ খবর পর্যন্ত পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। প্রাথমিক ওই ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
এদিকে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনায় এদিন সোলেমানির জানাজার অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
ইরানের জরুরি মেডিক্যাল সার্ভিসের প্রধান পির হোসেইন কৌলিভান্দ বলেন, সোলেমানির জন্মস্থান কেরমান শহরের আজাদি স্কয়ারে লোকজন পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শহরটিতে ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জানাজায় অংশ নিতে যাওয়ার জন্য যে সড়কটি ব্যবহার করা হয় সেটি ছিলো খুবই সরু। রাস্তা সরু না হলে ঘটনা এরকম নাও হতে পারতো।
এর আগে সোমবার (৬ জানুয়ারি) তার মরদেহ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হলে তাকে শেষ বিদায় জানাতে সমবেত হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। এসময় তাদের অনেকের হাতে ছিল ইরানি পতাকা ও সোলেমানির ছবি। জেনারেল সোলেমানির জানাজায় ইমামতি করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। কাঁদতে কাঁদতে জানাজার নামাজ পড়েন তিনি। সমবেত জনতার কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি সেদিন।
গত বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) দিনগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বাগদাদে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করা হয়।
মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৬২ বছর। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কেরমানের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য মাত্র ১৩ বছর বয়সে কাজ শুরু করেন তিনি। আর অবসর সময়ে যোগ দিতেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে।
১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের সময় ইরানের সামরিক বাহিনীতে কাজের মাধ্যমে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে শুরু করেন সোলেমানি। ১৯৮০ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরাকি সীমান্তের কাছে একটি মিশনের নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় বীর হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।
তার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সংঘর্ষ যেন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে! ইতোমধ্যে সোলেমানি হত্যাকাণ্ডের ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন খামেনি। প্রতিশোধ নেওয়ার পণ করেছেন ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক দল হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহও। অন্যদিকে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করা হলে ইরানের ওপর আরও হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
জেডএস