ঢাকা, রবিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভিয়েনায় সন্ত্রাসী হামলা: গ্রেফতার ১৪ জনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২০
ভিয়েনায় সন্ত্রাসী হামলা: গ্রেফতার ১৪ জনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে ওই দেশটির পুলিশ। গ্রেফতার সন্দেহভাজনদের মধ্যে বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক আছে বলে অস্ট্রিয়ার গণমাধ্যমগুলো বলছে।

মঙ্গলবার সেখানকার ১৮টি বাড়ি তল্লাশি করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজনদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া প্রায় সবারই অভিবাসনের ইতিহাস আছে বলে জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সসহ অস্ট্রিয়ার গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিব সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

সোমবারের হামলায় এক বন্দুকধারী ভিয়েনার প্রাণকেন্দ্রে গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে। ওই বন্দুকধারী একাই হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়। তবে হামলার এই ঘটনা নিয়ে অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তির বিষয়টিও গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে।

ভিয়েনার পুলিশ প্রধান গেরহার্ড পুয়ার্স্টেল সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আটকদের মধ্যে কয়েকজনের বাংলাদেশ, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, তুরস্ক বা রাশিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।

এবিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার বুধবার সংবাদ মাধ্যমগুলোকে বলেছেন, মোবাইল ফোনের ফুটেজ নিশ্চিত করেছে যে সোমবার ভিয়েনায় বন্দুকধারী একাই ওই চারজনকে হত্যা করেছিল। তবে এ নিয়ে অস্ট্রিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী নানা বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন।

তিনি জানান, হামলাকারীর সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগসূত্র আছে কিনা, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কার্ল নেহামার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমানে পাওয়া তথ্য অনুসারে সন্ত্রাসী হামলাটি হওয়ার আগে থেকেই কিছু জায়গায় ভুল তথ্য ছিল। জুলাইয়ে প্রতিবেশী স্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা, এক চিঠির মাধ্যমে অস্ট্রিয়া কর্তৃপক্ষকে জানায় যে, গত ২১শে জুলাই দুজন ব্যক্তি, খুব সম্ভবত আরব, তুর্কি বা চেচেন নাগরিক- ব্রাতিস্লাভার অস্ত্রের দোকানে যায়। সেখান থেকে তারা একে-ফর্টি সেভেনের সরঞ্জাম কেনে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই দুই ব্যক্তি অস্ট্রিয়ার নম্বর প্লেটযুক্ত বিএমডব্লিউ গাড়িতে করে আসে। এই সব তথ্য ২৩শে জুলাই ইউরোপোলের মাধ্যমে অস্ট্রিয়াকে জানানো হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কিছু ভুল হয়ে যায়।

এসব ত্রুটিগুলোর খুঁজে বের করতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার।

স্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার চিঠি অনুযায়ী, ইউরোপীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইউরোপোলের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ স্লোভাকিয়াকে ১০ই সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলে যে অস্ট্রিয়ান পুলিশ ইতোমধ্যে দু'জনের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘ওই দুই ব্যক্তি অস্ট্রিয়ান পুলিশদের কাছে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত হিসেবে আগে থেকেই পরিচিত। এরমধ্যে একজনকে ২২ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। ’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে গোলাবারুদ কেনার চেষ্টায় ব্যবহৃত গাড়িটি অন্য ২১ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির মায়ের নামে নিবন্ধিত ছিল। উগ্রপন্থী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে আগেই মামলা হয়েছিল। ভিয়েনায় হামলার পরে তাকে গ্রেফতারের জন্য আদালতে আবেদনও জানানো হয়েছিল।

স্লোভাকিয়া থেকে এসব তথ্য পাওয়ার পরে, অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থা, তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্রাতিস্লাভাতে কী ভুল হয়েছে উল্লেখ করে পুনরায় প্রশ্ন পাঠায় অস্ট্রিয়ার জননিরাপত্তা বিভাগের মহাপরিচালক ফ্রানজ রুফ।

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘তদন্ত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে এবং আইনসম্মতভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা সেটির বিষয়ে পরিষ্কার করা কমিশনের কাজ। পরে বুধবার অস্ট্রিয়ার জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিল, স্বাধীন কমিশন গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। ’

বিবিসি জানিয়েছে, ২০ বছর বয়সী ওই বন্দুকধারী একইসাথে অস্ট্রিয়া ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার নাগরিক বলে জানা গেছে। তিনি গুলি চালানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ওই তরুণ ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তিনি ইতিমধ্যে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগদানের চেষ্টা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং কারাগারে ছিলেন।

২০১৮ সালের শেষের দিকে, কর্তৃপক্ষ জানতো যে অস্ট্রিয়ার ৩২০ জন ব্যক্তি সিরিয়া এবং ইরাকের সন্ত্রাসী কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বা অংশ নিতে চেয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৫৮ জন এই অঞ্চলে মারা গেছেন এবং ৯৩ জন অস্ট্রিয়ায় ফিরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরও ৬২ জনকে দেশ ছাড়তে বাধা দেয়া হয়েছিল।

অন্তত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের মোবাইল ফোনের ভিডিও কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। ওইসব ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ঘটনাস্থলে কেবল একজন বন্দুকধারী ছিল, নেহামার বলেন যে, এই বিষয়টিতে দীর্ঘ দিনের বিভ্রান্তির অবসান ঘটেছে।

সুইজারল্যান্ডও এই হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশটির আইনমন্ত্রী বলেন যে গ্রেফতার দুজনের সাথে ওই বন্দুকধারীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

এদিকে, অস্ট্রিয়ার জননিরাপত্তা বিভাগের মহাপরিচালক ফ্রানজ রুফ বলেন যে অস্ট্রিয়ার সাথে সুইজারল্যান্ড এবং অন্য একটি দেশের সাথে যোগাযোগ ছিল। পুরো তদন্তকালে তিনি তাদের শনাক্ত করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

মঙ্গলবার উত্তর ম্যাসেডোনিয়া জানিয়েছেন যে তিনজন কোন না কোনভাবে এই হামলায় জড়িত ছিল এবং তাদের সবার অস্ট্রিয়ান ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২০
এসজেএ/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।