যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা এতটাই বেড়েছে যে বন্দুক বিক্রি বন্ধে যারা বিরোধিতা করতেন তারাও দাঙ্গাহাঙ্গামা রোধে আজ যুক্তিবাদী হয়ে উঠেছেন। অনেক চেষ্টা করেও হুট-হাট বন্দুক হামলা থামানো যাচ্ছে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোয় এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দেশে বন্দুক সহিংসতা রোধে আইন পাস করার আহ্বান জানান বাইডেন।
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্দুক হামলায় ১৮ শিশুসহ ২২ জন নিহতের ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর এ ঘোষণা দিলেন বাইডেন। এর আগেও অবশ্য কয়েকবার তিনি আইনের বিষয়ে কথা বলেছিলেন।
হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, এখন কাজ করার সময়। শিশুসহ আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের পরিবারকে বলতে চাই- আমরা, আমাদের জাতি তাদের ভালোবাসে।
তিনি বলেন, টেক্সাস, নিউইয়র্ক, ওকলাহোমায় হামলা, গুলি- আরও কত জীবন নষ্ট হবে? আমরা আর কত হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে রাজি? আমি আর সহ্য করতে পারছি না। যথেষ্ট হয়েছে।
কলাম্বাইন, স্যান্ডি হুক, চার্লসটন, অরল্যান্ডো, লাস ভেগাস, পার্কল্যান্ডের হত্যাকাণ্ডের পর কিছুই করা হয়নি। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব ঘটনার তালিকা করলেও কোনো সমাধান হয়নি।
বাইডেন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গা এখন ‘হত্যার ক্ষেত্র’ হয়ে গেছে। এখনই যদি না থামা যায়, তাহলে বিপদ বাড়বে। এ সময় আইন প্রণেতাদের (সিনেট রিপাবলিকান) উদ্দেশে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন পাস করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা আবার আমেরিকান জনগণকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। এটি (অস্ত্র আইন) দেশের সবার জন্য নিরাপত্তা বাড়িয়ে তুলবে।
এ সময় কংগ্রেস সদস্যদের বন্দুক আইন নিয়ে পার্লামেন্টে সংশোধনের বিল আনতে অনুরোধ করেন প্রেসিডেন্ট।
চলতি বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন। বাইডেন সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ একটি ‘সাধারণ জ্ঞানের’ বিষয়। এ সময় সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী ও বন্দুক নিয়ন্ত্রণ রোধের ব্যাপারেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেও যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরব ছিলেন জো বাইডেন। এ ব্যাপারে আইন পাস করতে কয়েকটি প্রস্তাবও করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল নির্দিষ্ট কিছু আগ্নেয়াস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা। ২০০৪ সালে রিপাবলিকান প্রশাসনের অধীনে এটি বাতিল করা হয়েছি। এ ছাড়া উচ্চ ক্ষমতার ম্যাগাজিন, সুরক্ষিত স্টোরেজ আইন, লাল পতাকা আইন ও বন্দুক তৈরিকারীদের জন্য সুরক্ষা আইন অপসারণের প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
বাইডেনের ভাষণের পর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট যে আইন করতে চাচ্ছেন, তা জারি করা হয়ে গেলে বন্দুক মালিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হবে। এটি বাস্তব সমাধান নয়। বাইডেনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি সত্যিকারের নেতৃত্ব নয় এবং আমেরিকার জন্য প্রয়োজন তাও নয়।
অন্য যেকোনো ধনী দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার মৃত্যুর হার বেশি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় নিউইয়র্কে ১০ জন কৃষ্ণাঙ্গ, টেক্সাসের স্কুলে ২২ জন, ওকলাহোমায় একজন বন্দুক হামলার শিকার হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া পুলিশের গুলিতেও দেশটিতে নিহতের সংখ্যা অনেক। যদিও এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন কোনো ঘটনার হামলাকারী বা হামলার পরিকল্পনাকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২২
এমজে