ঢাকা, শনিবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ইসলাম

ইসলামী শিল্পকলার অবিচ্ছেদ্য অংশ জায়নামাজ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা, সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ |
আপডেট: ১০:৩৭, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
ইসলামী শিল্পকলার অবিচ্ছেদ্য অংশ জায়নামাজ

‘জায়নামাজ’ একটি ফারসি শব্দ, যার আরবি হলো মুসল্লা। নামাজের সময় মেঝেতে বিছানো বিশেষ গালিচাকে আমাদের এই অঞ্চলে জায়নামাজ বা মুসল্লা বলা হয়।

যদিও নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজ বিছানো শর্ত নয়, তবু অনেকে ধুলাবালি থেকে সতর্ক থাকতে নামাজ পড়ার সময় জায়নামাজ ব্যবহার করে। শীতকালে টাইলস করা মসজিদগুলোতে তো নামাজের কাতারে ব্যবহৃত বড় কার্পেট বা জায়নামাজ ছাড়া নামাজ পড়া কষ্টকর।

মসজিদের মেঝেতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সব সময় জায়নামাজ ব্যবহৃত না হলেও বাড়িতে নামাজ ও নফল ইবাদত করার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষই জায়নামাজ ব্যবহার করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের ঘরেই একাধিক জায়নামাজ পাওয়া যায়। আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজ/ওমরাহ থেকে ফিরে প্রিয়জনদের যেসব উপহার দেন, তার অন্যতম একটি হলো জায়নামাজ। একসময় মুসলিম শাসকদের উপহারের তালিকায়ও জায়নামাজ থাকত।

মহানবী (সা.) কি জায়নামাজ ব্যবহার

করেছেন : মহানবী (সা.) নিজেও নামাজ পড়ার সময় জায়নামাজ ব্যবহার করেছেন। তাঁর ব্যবহৃত জায়নামাজটির নাম ছিল ‘খুমরাহ’। মহানবী (সা.) নামাজ পড়ার সময় সেই জায়নামাজটি ব্যবহার করতেন। মাঝে মাঝে আয়েশা (রা.) তাঁকে নামাজের জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে দিতেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাকে নির্দেশ দেন, হাত বাড়িয়ে আমাকে মসজিদ থেকে জায়নামাজটি নিয়ে দাও [যেহেতু মহানবী (সা.)-এর বসতঘর মসজিদের সঙ্গেই লাগানো ছিল]। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, আমি ঋতুবতী অবস্থায় আছি। উত্তরে তিনি বলেন, তোমার ঋতুস্রাব তো তোমার হাতে নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৪)
আধুনিক জায়নামাজ শিল্পের বিকাশ : ইরাক ও ইরানের আরব অঞ্চলে কার্পেটশিল্পের প্রসার ঘটে ইসলাম আগমনের বহু আগে। ইসলাম আগমনের পর কার্পেটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় জায়নামাজশিল্প।

দৃষ্টিনন্দন কার্পেট ও জায়নামাজ তৈরি হতো এ অঞ্চলে।

ইউরোপের ঘরে ঘরে মেঝেতে যখন নলখাগড়ার বিছানা মুসলিম জাহানে তখন রসায়নবিদ্যার বদৌলতে নকশা ও বুননে অনন্য রঙিন কার্পেটের ছড়াছড়ি। কার্পেট বুননে মুসলমানদের কৌশল ও শৈল্পিক জ্ঞান বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে। (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান, পৃষ্ঠা-৩৬৩)

এ ছাড়া তুর্কি ও মিসরীয় জায়নামাজগুলো বুননে ও নকশায় বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি জায়নামাজ : ২০০৯ সালে লন্ডনের সোথবির নিলামঘরে একটি প্রাচীন জায়নামাজ বিক্রি হয়, ধারণা করা হয় এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি জায়নামাজ। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, জায়নামাজটি ছিল ১৬-১৭ শতকের দিকের। নিলামে সেই প্রাচীন জায়নামাজটি বিক্রি হয় ২৭ লাখ ২৯ হাজার ২৫০ পাউন্ডে! যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি হয়।

জানা যায়, অন্তত পাঁচজন সংগ্রাহকের লড়াই শেষে এক অজ্ঞাতপরিচয় ক্রেতা এই রত্নসম গালিচাটি নিজের করে নেন। অথচ নিলামের আগে ধারণা ছিল এর দাম হবে মাত্র ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চা এক লাখ ২০ হাজার পাউন্ড। কিন্তু সিল্ক ও ধাতব সুতাযুক্ত সেই বিরল জায়নামাজ যেন সব হিসাব পাল্টে দিল, দাম দাঁড়াল পূর্বাভাসের বিশ গুণেরও বেশি!

গালিচাটির গায়ে লেখা শিলালিপির ইঙ্গিত থেকে জানা যায় যে এটি শুধু এক টুকরা জায়নামাজ বা প্রাচীন শিল্পকর্ম ছিল না, বরং এটি ছিল ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। গবেষকরা ধারণা করছেন, এটি ছিল সাফাভিদ দরবার থেকে ওসমানীয় সুলতান মুরাদ তৃতীয়কে দেওয়া এক কূটনৈতিক উপহার, যা সম্ভবত ১৫৯০ সালের শান্তিচুক্তির স্মারক হিসেবে দেওয়া হয়।

সেদিন সোথবির Arts of the Islamic World নিলামে এক দিনে মোট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭.৯ মিলিয়ন পাউন্ডের শিল্পকর্ম। কিন্তু নিঃসন্দেহে সবার নজর কেড়েছে এই একটি জায়নামাজই। (সূত্র : ফিন্যানশিয়াল মিরর)

জায়নামাজ ব্যবহারে সতর্কতা : নামাজ শুদ্ধ বা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য জায়নামাজ শর্ত নয়। নামাজের জায়গা পবিত্র হলেই নামাজ আদায় হয়ে যায়। তাই দামি জায়নামাজ ব্যবহারের মধ্যে কোনো বিশেষ ফজিলত নেই। জায়নামাজ ব্যবহারের সময় এটা লক্ষ রাখা জরুরি যে তার চোখ-ধাঁধানো নকশাগুলো নামাজের মনোযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে কি না? কারণ মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নামাজ অবস্থায় মনোযোগ বিনষ্টকারী জিনিস পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাঁর চাদর গায়ে দিয়ে নামাজ আদায় করলেন। চাদরটি ছিল কারুকার্যখচিত। তিনি কারুকার্যের দিকে একবার তাকালেন, তারপর সালাম ফিরিয়ে বলেন, এ চাদরটি আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও। কারণ একটু আগে তা আমায় নামাজ থেকে অন্যমনস্ক করে দিয়েছে। আর আবু জাহমের আম্বিজানিয়্যা বা কারুকার্যবিহীন চাদর আমার জন্য নিয়ে এসো। (বুখারি, হাদিস : ৫৪০১)

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।