ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জ্ঞানার্জনে নারীর অংশগ্রহণ

তাযকিরা খাতুন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৫
জ্ঞানার্জনে নারীর অংশগ্রহণ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবকালে নারী জাতি বিশেষ করে আরবের নারীরা ছিল সমাজে চরমভাবে অবহেলিত। উপযুক্ত শিক্ষা ও সমাজ চেতনাবোধ বিবর্জিত নারীদের রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষার অধিকার দিয়ে মানুষে হিসেবে পুরুষের সমমর্যাদাসম্পন্ন বলে ঘোষণা করলেন।

নবী করিম (সা.)-এর এই অসাধারণ বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ সমকালীন নারীরা একটি উত্তম জাতি গঠনে পুরুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। এমনকি আবদ্ধ ও অবহেলিত নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে শুরু করে। বিশেষ করে শিক্ষা অর্জনে। যার ফলে তারা দ্বীনের ব্যাপারে গভীর জ্ঞানের অধিকারিনী হয়েছিলেন।

তৎকালীন নারীদের শিক্ষা অর্জনের আগ্রহ ইতিহাস হয়ে আছে। হাদিসে আছে, দ্বীন শেখার ব্যাপারে গভীর চেতনার অধিকারিনী এক নারী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সমস্ত শিক্ষা-দীক্ষা পুরুষদের অংশে পড়েছে, আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করুন, সে দিন আপনি আমাদেরকে আল্লাহ আপনাকে যা শিখিয়েছেন তা শিক্ষা দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, অমুক দিন তোমরা সকলে একত্রিত হবে, সুতরাং তারা একত্রিত হয় এবং নবী (সা.) তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করেন। – সংক্ষেপিত, সহিহ বোখারির সূত্রে

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। ’ এই আয়াতের স্পষ্টভাবে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জ্ঞানার্জনের কথা বলা হয়েছে। মূলত এ হাদিসের মাধ্যমে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। এ হাদিসে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইসলাম নারী শিক্ষার বিরোধী নয়। বরং ইসলাম নারী শিক্ষার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে।

নারী শিক্ষার প্রতি এমন উৎসাহের কারণে হজরত আয়েশা (রা.) ছয় লাখ হাদিস ও গোটা কোরআন শরিফ মুখস্ত করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিচক্ষণ ও মেধাবী শিক্ষয়িত্রী। তিনি শুধু নারীদের নয়, পুরুষদেরও শিক্ষাদান করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আয়েশার কাছ থেকে তোমাদের ধর্মের এক অর্ধাংশ শিখে নাও। ’

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের সে যুগে নারীরা শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে পন্ডিত ছিলেন। ১৫৪৩ জন মহিলা সাহাবি ছিলেন, যারা শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা, চিকিৎসাবিদ্যা, বক্তৃতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কোনো অংশেই পুরুষদের চেয়ে কম ছিলেন না।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের তার মহিয়সী সহধর্মিনীদের হাদিসের সংরক্ষক মনে করা হতো। তন্মধ্যে হজরত হাফসা, হজরত উম্মে হাবিবা, হজরত উম্মে সালমা ও হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তাদের মাধ্যমে হাদিস, তাফসির ও বিভিন্ন মাসয়ালা প্রসার লাভ করে। তৎকালীন আরবের অনেক জ্ঞানী-গুণী ও সুধীজন তাদের ছাত্র ছিলেন।

এভাবেই প্রত্যেক যুগে ইসলামের ইতিহাসে পুরুষের সঙ্গে নারীরা দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও উন্নতির জন্য অবিরাম খেদমত করে গেছেন। এমনকি মহিলা হাদিসবেত্তারা হাদিস শিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশেও ভ্রমন করেছেন। যেমন জাভিরিয়া বিনতে ওমর (মৃত্যু৭৮৩ হি.) এবং জয়নব বিনতে আহমদ বিন ওমর (মৃত্যু ৭২২ হি.) প্রমুখ হাদিস শিক্ষার জন্য দূর-দূরান্ত ভ্রমণ করেন। তারা মিসর ও মদিনায় হাদিসের কেন্দ্র স্থাপন করেন।

এখানে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, হাদিসের ক্লাসে একই শ্রেণিতে নারী-পুরুষ উভয়ে শরিক হতেন। তবে তারা কঠোরভাবে পর্দার বিধান মেনে চলতেন। বস্তুত সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে প্রত্যেক যুগে শিক্ষার প্রচার-প্রসারে নারীরা যে সেবা প্রদান করে গেছেন যে বিষয়ে সামান্য আলোচনা করা হলো। কারণ, মুসলিম নারীরা জ্ঞান সাধনা থেকে শুরু করে কাব্য সাহিত্য, ফতোয়া প্রদান ও রাজনীতিতে যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। আমরা চাই নারী শিক্ষার এ ধারা চলমান থাকুক অনন্তকাল। জ্বলতে থাকুক নারীর মনে সভ্যতা নির্মাণের বহ্নিশিখা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘন্টা, মে ০৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।