ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কাবা চত্বরে প্রতিদিন ইফতার করেন দশ লাখ রোজাদার

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
কাবা চত্বরে প্রতিদিন ইফতার করেন দশ লাখ রোজাদার

পবিত্র রমজান মাসে মক্কা শরিফের মসজিদে হারাম ও এর খোলা চত্বরে প্রতিদিন দশ লক্ষাধিক মুসল্লি ইফতার করছেন। ইফতারিতে পবিত্র জমজম কূপের পানির সঙ্গে সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী খেজুর-খোরমাসহ বিভিন্ন পদের খাবার দিয়ে লাখ লাখ মুসল্লি ইফতারিতে অংশ নিচ্ছেন।



অবাক করার বিষয় হলো, এ অগণিত মানুষের ইফতার সামগ্রী নিয়ে নেই কোনো কাড়াকাড়ি, নেই কোনো বিশৃঙ্খলা। বিশ্বের বৃহত্তম এ ইফতার মাহফিলের ইফতার সামগ্রী কোথা থেকে আসছে, তার সঠিক কোনো হিসেব নেই কারো কাছে। এমনকি লাখ লাখ মুসল্লির ইফতারি প্রস্তুত করতে কারো কাছে কেউ হাতও পাতেন না। আরো অবাক করার কথা হলো, এত বিপুলসংখ্যক মুসল্লির কেউই এখানে কোনো কিছু কিনে ইফতারি করছেন না, ইফতার শেষে কেউ শূন্য হাতে ফেরেনও না।

এছাড়াও গোটা সৌদি আরবের মতো মক্কা নগরীর পথে-প্রান্তরেও অজস্র মুসল্লি ইফতার করছেন। মক্কাবাসীরা নগরীর পথে পথে মুসল্লিদের মাঝে ইফতার বিতরণ করতে শুরু করেন আসরের নামাজের পর থেকেই। গোটা রমজান মাসই ইফতারিকে কেন্দ্রকরে গোটা মুসলিম বিশ্বের মতো মক্কা নগরীজুড়েই যেন এক ধরনের উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। পবিত্র এ নগরীর রোজাদাররা অপর রোজাদারের জন্য ইফতার পরিবেশন করেই যেন তৃপ্তি লাভ করছেন।

ইফতার সরবরাহ সওয়াবের কাজ। এ বিষয়কে মাথায় রেখে মহান আল্লাহতায়ালাকে রাজী-খুশি করার বাসনা নিয়ে মক্কা নগরীর হাজার-হাজার মানুষ ছাড়াও পবিত্র ওমরা করতে আসা গোটা বিশ্বের অগণিত মুসলমানরা যার যার সামর্থ অনুযায়ী ইফতার সামগ্রী নিয়ে ছোটেন মসজিদে হারামে।

সবার ইফতার সামগ্রীতেই নবী (সা.)-এর সুন্নত আরব দেশের ঐতিহ্যবাহী খেজুর-খোরমার পাশাপাশি রুটি থাকে। এছাড়াও প্যাকেটজাত বিভিন্ন ফলের জুস, দুধ, মাঠা ও ঐতিহ্যবাহী দধি বিতরণ করা হয় ইফতার সামগ্রীতে। মুসাম্বী, মাল্টা, আপেল ও আঙ্গুরসহ নানা ধরনের পুষ্টিকর ফল নিয়েও আসছেন অনেকে ইফতারে বিতরণের জন্য। এমনকি অত্যন্ত ভালোমানের আমের জুসও পাওয়া যায় ইফতারিতে। তবে সব কিছুর আগে অপরিহার্য পবিত্র জমজম কূপের পানি। আসর নামাজের পরেই মসজিদে হারামের ভেতরে ও বাইরে ইফতার আয়োজন শুরু হয়ে যায়। এসময় থেকেই জমজমের সুস্বাদু ঠাণ্ডা পানির কন্টেইনার ও গ্লাস মসজিদের বিভিন্ন অংশে স্থাপনসহ দস্তরখান বিছিয়ে একের পর এক লাইন করে ইফতারি সাজানো শুরু হয়। ছোট-বড় আর ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একাকার হয়ে যান তখন পবিত্র কাবা ঘরের খোলা চত্বর ও মসজিদে হারামের ভেতর-বাইরের ইফতার মজলিসে।

এ ইফতার আয়োজনে চেনা-জানার কোনো দরকার নেই, যাকে পাচ্ছে তাকেই অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলছে, ‘ভাই! আসুন আমরা একসাথে একটু ইফতার করি। ‘ এ ধরনের সম্বোধন করে যথেষ্ট তাজিমের সঙ্গে রোজাদারদের নিয়ে যাওয়া হয় ইফতার আয়োজনে।

মসজিদে হারামের প্রায় ৯০টি গেট দিয়ে রোজাদার মুসল্লিরা ধীরস্থীরভাবে প্রবেশ করছেন। সব ভোদাভেদ ভুলে এভাবে একসঙ্গে পাশাপাশি বসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে ইফতার গ্রহণের এ দৃশ্য বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।

মাগরিব আজানের সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসাথে রোজা ভঙ্গ করে ইফতার গ্রহণ শেষে এক জামাতে নামাজ আদায় করেন। মক্কার যুবক ও কিশোররা মসজিদে ইফতার ও মাগরিব নামাজ শেষ করে বাড়ী ফেরত মুসল্লিদের পথে পথে গরম চা ও কফি পরিবেশন করে। বড় ফ্লাস্ক ও কাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা শিশু-কিশোররা মসজিদে হারাম ফেরত মুসল্লিদের হাতে গরম চা ও কফির পেয়ালা তুলে দিয়ে এক ভিন্ন তৃপ্তি লাভ করে।

বস্তুত ইসলামের এ সৌভ্রাতৃত্ববোধ সকলকে অবাক করলেও যুগ যুগ ধরেই এটাই বাস্তবতা পবিত্র মক্কা নগরীতে। পবিত্র কাবা ঘর চত্বর এবং মসজিদে হারামের মতো মক্কা নগরী ও এর সন্নিহিত এলাকার অন্যসব মসজিদেও প্রতিদিন চলছে ইফতারের এমন ব্যাপক আয়োজন।

আসলে মক্কার ইফতারের এমন অপূর্ব দৃশ্য বিরল। এটা ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দের পরিচায়কই বটে। ইসলামের সর্ববৃহৎ পবিত্র স্থান মক্কা শরিফের মসজিদে হারাম এবং কাবা ঘর চত্বর এখন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের মানুষের অপূর্ব মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের কেবলা পবিত্র কাবা ঘর সত্যিই সবভেদাভেদ ভুলে সকলকে এক করে দিয়েছে ইফতারের আয়োজনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।