ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

হালাল গ্রহণ ও হারাম বর্জনের অনুশীলন

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
হালাল গ্রহণ ও হারাম বর্জনের অনুশীলন

রোজাদার মহান আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়। কারণ সে রোজা রাখার মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিজ জীবনে আল্লাহতায়ালার গুণের অনুশীলন করে।

মানুষ যখন একে অন্যকে ভালোবসে- তখন তারা পরস্পরকে অনুকরণ করতে থাকে। যা দেখে অন্যরা বুঝতে পারে যে, তারা এক অপরকে ভালোবাসে। তেমনি মুমিন বান্দা যখন আল্লাহর ভালোবাসায় বিমোহিত হয়ে তার অনুকরণ করতে থাকে; তখন আল্লাহতায়ালা তাকে ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আল্লাহ এক ও একক। আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি কাউকে জন্ম দেননি আর তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমকক্ষ কেউ হতে পারে না। -সূরা ইখলাস

আল্লাহতায়ালা সব ধরনের খাদ্য-পানীয় ও যৌনতামুক্ত এক মহান সত্ত্বা। মুমিন বান্দা যখন রোজা রাখতে গিয়ে দিনের বেলাতে খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রী সম্ভোগ বর্জন করে, তখন বাহ্যত সে নিজের মধ্যে মহান আল্লাহর গুণের সাময়িক অনুশীলন করে। আর এটা আল্লাহতায়ালা খুব ভালোবাসেন।

রোজাদার রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে হালাকে গ্রহণ করার ও হারামকে বর্জন করার বিরতিহীন অনুশীল করে একমাস ধরে। হালালপন্থায় উপার্জিত খাদ্য, বৈধ-বিশুদ্ধ পানি, বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে মিলন- রোজাদারের জন্য রমজানের দিনের বেলায় হারাম ঘোষণা করেছে ইসলামি শরিয়ত। অথচ উপরোক্ত বিষয়গুলো রমজানের রাতে এবং অন্যান্য সময়ে দিন-রাত সব সময়ই হালাল। অর্থাৎ রোজদারের জন্য মৌলিক হালাল বস্তুকে সাময়িকভাবে হারাম করা হয়েছে। আর মুসলমানের জীবনে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম। রমজান কি অন্যকোনো মাস, দিন কি রাত সর্বক্ষণ হারাম। মৌলিক হারামকে হালাল করার কোনো পথ নাই। রোজাদার ত্রিশদিনের রোজা পালন তথা হালালকে গ্রহণ ও হারামকে বর্জনের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে হালালকে গ্রহণ ও হারামকে বর্জনের অভ্যাস গড়ে তুলবে- এটাই আসল উদ্দেশ্য। জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর প্রতি নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিদেন করার মধ্যেই ঈমানের পরিপূর্ণতা নিহিত। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ- সমগ্র জগতের স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার জন্য। -সূরা আল আনআম : ১৬২

বস্তুত মানুষের করণীয় আর বর্জনীয় বিষয়াবলি ঠিক করে জীবনের গতিপথ স্থির করে নিলে, মহান আল্লাহর প্রিয় হওয়া খুবই সহজ।

রোজাদারকে মহান আল্লাহর ভালোবাসার বিষয়টি রাসূলে কারিম (সা.) অনেকগুলো হাদিসের মাধ্যমে উম্মতের সামনে পেশ করেছেন। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেকটি আমল তার নিজের জন্য শুধু রোজা ছাড়া। রোজা শুধুই আমার জন্য আর আমি নিজেই এর পুরস্কার প্রদান করব। আর রোজা হল ঢালস্বরূপ, অতএব তোমাদের কেউ যখন রোজ রাখে সে যেন অশ্লীল কাজ না করে, শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সঙ্গে বিবাদ করতে আসে, তা হলে সে শুধু এতটুকু বলবে, ‘আমি একজন রোজাদার। যে মহান সত্ত্বার হাতে আমি মোহাম্মদের জীবন! তার নামে শপথ করে বলছি, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ (সারাদিন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ না করার দরুণ) মহান আল্লাহর নিকট মিশকে আম্বরের চেয়েও প্রিয়। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে- যা সে লাভ করবে। একটি হলো- তার ইফতারের সময় সে আনন্দিত হয়। আর দ্বিতীয়টি সে যখন তার রবের সঙ্গে মিলিত হবে তখন সে তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করিম (সা.) বলেছেন, জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা রয়েছে যার নাম- ‘রাইয়্যান। একমাত্র রোজাদার ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন রোজদাররা দাঁড়িয়ে যাবে। যখন তারা সবাই ভেতরে চলে যাবে তখন দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। রোজাদার ছাড়া অন্য কেউ ওই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, অপর এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটিমাত্র রোজা রাখে, তার ওই একটি দিনের বাদৌলতে মহান আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।

লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘন্টা, জুলাই ০২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।