ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলাদেশের গর্ব: বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদ

মুফতি মুহাম্মদ তাসনীম, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
বাংলাদেশের গর্ব: বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদ

বাংলাদেশের মসজিদের ইতিহাসে ষাট গম্বুজ মসজিদ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। শৈল্পিক স্থাপনা হিসেবে বিশ্ব মসজিদ শিল্পে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ অনন্য বৈশিষ্টের প্রতীক।

যুগ যুগ ধরে এ মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। ঐতিহাসিকরা এ মসজিদটি নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে ও প্রবন্ধে বিস্তর আলোচনা করেছেন।

এ বিশ্বখ্যাত মসজিদটির কোনো লিপি মুদ্রা নেই। তবে অনুমান করা হয় হজরত খান জাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। খান জাহানের সমাধি সৌধের লিপিতে ৮৬৩ হিজরির ২৬ জিলহজ মাস লেখা রয়েছে। অর্থাৎ হজরত খান জাহান আলী (রহ.) ২৫ অক্টোবর ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। অনেক ঐতিহাসিকদের ধারণা, বাগেরহাটে বা সুন্দরবন অঞ্চলে হজরত খান জাহান আলী (রহ.) জীবদ্দশাতেই মসজিদটি নির্মাণ করেন। সে কারণেই মসজিদটির নির্মাণ কাল (১৪৫৯ খ্রি.) আগে বলেই অনেকের ধারণা।

এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।

ভূমি নকশানুযায়ী মধ্যভাগে ৭টি চৌচালা ছাদ এবং উভয় পাশে ৩৫টি করে মোট ৭০টি গম্বুজ। সব মিলিয়ে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭টি। বিশালাকার ঘোড়া দিঘীর পাশে এ স্থাপত্য ইমারতটি অবস্থিত। মসজিদটির অভ্যন্তরে ৬০টি স্তম্ভ রয়েছে। খুব সম্ভবত এ ষাটটি স্তম্ভ হতে ষাট গম্বুজ নামটি এসেছে। ধারণা করা হয়, মসজিদটি সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদের (১৪৪২-১৪৬০) শাসনামলে নির্মিত।

বাংলাদেশের মুসলিম স্থাপত্য পুরাকীর্তির সর্বাপেক্ষা চমৎকার ও উৎকৃষ্ট নিদর্শন হচ্ছে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ। উত্তর-দক্ষিণে মসজিদটির প্রাচীরের প্রশস্থতা প্রায় ৯ ফুট। গম্বুজগুলো ছাদ থেকে ১৫ ফুট উঁচু। চার কোণার গোলাকৃতির বরুজ, ছাদ সুবিস্তৃর্ণ বক্রাকার কার্নিশ আয়তকার ফ্রেমে এটি আবদ্ধ। বাংলাদেশের আবহাওয়ার দিকে খেয়াল রেখে কার্নিশ বক্রাকার করা হয়েছে। মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ৩৫টি করে যে কক্ষ রয়েছে যা গম্বুজ দ্বারা আবৃত্ত। ৬০টি পাথরের স্তম্ভ যার ওপর মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে। তার একটি হতে অন্যটির দূরত্ব ১৩ ফুট। মধ্য ভাগটি ১৬ ফুট ৬ ইঞ্চি। এ বিখ্যাত মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মেহেরাব রয়েছে। এতো মেহেরাব অন্য কোনো মসজিদে দেখা যায় না।

মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা।

মসজিদে প্রবেশের প্রধান খিলান পাথরটির উচ্চতা ৯ ফুট ৭ ইঞ্চি, একটির ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, অন্যটির ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। পূর্বের দেয়ালে ১১টিসহ এ মসজিদে দরজা রয়েছে মোট ২৫টি। সামনের দুটো বরুজে এক সময় হয়তো আলো জালানো হতো। লাল পোড়া ইট দিয়ে তৈরি এ মসজিদের দেয়াল ৯ ফুট প্রস্থ।

কারো কারো মতে, খান জাহান অালী (রহ.) এই মসজিদটিকে নামাজের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিলো দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদ্রাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের’ ২০ টাকা নোটে এ মসজিদের ছবি ছেপে নোট প্রকাশ করেছেন। ১৯০৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং ১৯৭১ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ মসজিদটি দেখাশুনা করে আসছে। বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক উৎকৃষ্ট সাক্ষী হয়ে এগিয়ে চলছে মহাকালের দিকে। কামনা করি এ যাত্রা অব্যাহক থাকুক অনন্তকাল।



বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।