ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

হজের খরচ বাড়ছে, অধরা হয়ে যাচ্ছে অনেকের স্বপ্ন

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
হজের খরচ বাড়ছে, অধরা হয়ে যাচ্ছে অনেকের স্বপ্ন হজপালন সহজ করতে স্থল ও জলপথে হজ গমনের পথ উন্মুক্ত করে দিলে হজের খরচ অনেকটাই কমে যেতো

মনে করা হচ্ছিল এবার হজ প্যাকেজের খরচ বাড়ানো হবে না। কিন্তু না, বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও হজ প্যাকেজের মূল্য বাড়ানো হলো। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া হজ প্যাকেজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ গতবারের তুলনায় ১৪ থেকে ২১ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজের সঙ্গে মিল রেখে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও একই হারে খরচ বাড়ানো হবে বলে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের নেতারা জানিয়েছেন।

ফি বছর এভাবে হজের খরচ বাড়ানোর ফলে ফরজ ইবাদত পবিত্র হজ পালনের ব্যয় ক্রমেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজপালন করতে পারছেন না।

অধরা থেকে যাচ্ছে হজপালনের স্বপ্ন। কয়েকবছর ধরে হজপালন সহজ করতে স্থল ও জলপথে হজ গমনের পথ উন্মুক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। হজপালনে এ মাধ্যম ব্যবহার করা হলে হজের খরচ অনেকটাই কমে যেতো।  

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি- ২০১৭’ এবং ‘হজ প্যাকেজ- ২০১৭’-এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই প্যাকেজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর আওতায় (কোরবানি ছাড়া) হজে যেতে এবার তিন লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এর (কোরবানিসহ) আওতায় তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা খরচ হবে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার সর্বনিম্ন এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৭ টাকা খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, গত বছর যা ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৪১ টাকা। এ হিসাবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজে যাওয়ার মৌলিক খরচ বেড়েছে এক হাজার ৯৬ টাকা। এ ‘মৌলিক’ খরচের সঙ্গে সৌদি আরবে বাড়িভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, কোরবানিসহ অন্যান্য খরচ হজ এজেন্সিগুলো যোগ করবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে বেসরকারি এজেন্সিগুলো সর্বনিম্ন তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকার নিচে নিতে পারবে না। এর ওপরে সুযোগ-সুবিধা অনুসারে তারা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্তও নিয়ে থাকে।

চলতি বছর নিট বিমান ভাড়া দেড় হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে; যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৪৫০ ডলার। এতে এ খাতে খরচ বেড়েছে ৫০ ডলার বা প্রায় চার হাজার টাকা।

হজসেবা খাত ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে হজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল মাত্র ৯০ হাজার টাকা। পরের বছর থেকে প্রতিবারে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে খরচ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৫ সালে প্যাকেজ-১ এ তিন লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৫ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।  

আর গত বছর প্যাকেজ-১ এ তিন লাখ ৬০ হাজার ২৮ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ তিন লাখ চার হাজার ৯০৩ টাকা নির্ধারিত ছিল। চলতি ২০১৭ সালের প্যাকেজ-১ এ গত বছরের থেকে ২১ হাজার ৪৮০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ ১৪ হাজার ৪৫২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
ফি বছর হজের খরচ বাড়ানোর ফলে ফরজ ইবাদত পবিত্র হজ পালনের ব্যয় ক্রমেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে
হজ এজেন্সি সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম টাকায় হজ করেন সেখানকার নাগরিকেরা। ভারতে এক লাখ ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় হজ করা যায়। ওই দেশের সরকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের পবিত্র হজ পালনে ভর্তুকি দিয়ে থাকে।

হজের খরচ বাড়ায় বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেছেন, ‘অনেকগুলো আইটেমের খরচ বেড়ে গেছে। সৌদি রিয়ালের দাম বেড়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে, বাড়িভাড়াও একটু বেড়েছে; সব মিলিয়েই খরচ কিছুটা বেড়েছে। ’

নিয়ম করে প্রতি বছর হজের খরচ বাড়ার প্রেক্ষিতে হজ গমনেচ্ছু অনেকেই সরকারের সমালোচনা করছেন। তাদের দাবী, বিমান ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণে হজের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ সাধারণ যাত্রীরা সৌদি এয়ারলাইন্সে গেলে ৪০ থেকে ৪৮ হাজার টাকায় সৌদি আরব যেতে পারেন। ওমরায় যাতায়াত ভাড়া নেওয়া হয় ৬০ হাজার টাকা। আর হজে এক লাখ ২০-৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এটা কোন যুক্তিতে নেওয়া হয় তা অজানা।

আমরা মনে করি, বিমানভাড়া কম হলে হজের খরচ অনেকটাই কমে যেত। অভিযোগ রয়েছে, বিমান সারা বছর লোকসানে থাকে। তারা হজ দিয়ে সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়। এ কারণে হজের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এখন কথা হলো, হজের মতো এবটি ইবাদতকে কেন্দ্র ব্যবহার করে মুনাফা বৃদ্ধির চিন্তা করা হবে। এর কি কোনো বিকল্প ভাবা যায় না?

চলতি হজ মৌসুমে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ জন। অবশ্য হজযাত্রীর কোটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের হজ যাত্রী নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করতে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এখন সৌদি আরব অবস্থান করছেন।  

এ বার হজযাত্রীদের জন্য বেশ কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। শর্তের মাঝে রয়েছে- সবাইকে এমআরপি পাসপোর্টধারী হতে হবে। প্রতিটি হজ এজেন্সিকে কমপক্ষে ১৫০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী প্রেরণের অনুমতি মিলবে। একটি বিমান তিনটি হজ এজেন্সির হাজী এবং তিনজন মোয়াল্লেমকে পাঠাতে পারবে। হজযাত্রীদের কোরবানির অর্থ সৌদি আরবের ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কুপন ক্রয়ের মাধ্যমে দিতে হবে। সরাসরি পশু কিনতে পারবে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোরবানি করে দেবে।

সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের অনুমোদিত কম স্পেসসহ বাসস্থান ভাড়া করতে হবে এবং সৌদি সরকারের অনুমোদিত ক্যাটারিং কোম্পানির মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করতে হবে। নিজেরা কেউ রান্না করতে পারবে না। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। খাবার, বাসস্থান, হোটেল ও খাবারের মূল্য অনলাইনে পাঠাতে হবে। সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীর জন্য অতিরিক্ত ১ শতাংশ বেশি বাড়িভাড়া করতে হবে। হজযাত্রী প্রতি ৫০ সৌদি রিয়াল ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে প্রদান করতে হবে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।